কিন্তু জনবল ও অর্থ সংকটে ভুগছে সমৃদ্ধ এই গ্রন্থাগার। ফলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে নানা সমস্যার।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) সরেজমিনে বাংলা একাডেমি গ্রন্থাগারে গেলে গবেষকরা বলেন, ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে গবেষণার জন্য এটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য। এখানে অল্প কিছু ছাড়া বইয়ের সংকট বেশি না। তবে জায়গা ও জনবলের সংকট তীব্র। একটি বই আনতে বললে লোক পাওয়া যায় না’।
বাংলা একাডেমির গ্রন্থাগারের দু’টি সেকশন- একটি লাইব্রেরি ও অন্যটি জার্নাল সেকশন। ড. শহীদুল্লাহ ভবনের ২য় তলা ও তয় তলার একাংশ নিয়ে লাইব্রেরিতে বাংলা ভাষা-সাহিত্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে এক লাখের বেশি বই রয়েছে। ৬টি টেবিলে চারজন করে মোট ২৪ জন একসঙ্গে বসে পড়তে পারেন। তবে টেবিলগুলো বই রাখলে চারজন পড়ার মতো উপযোগী নয় বলে অভিযোগ করেন পাঠকরা।
তবে গোডাউন ভবনের জার্নাল সেকশনে অযত্ন-অবহেলার সুষ্পষ্ট ছাপ। পুরনো বিল্ডিংটির ৩য় তলার সেকশনটি ঘুরে দেখা গেছে, অন্ধকার ও স্যাঁত স্যাঁতে ভাব কক্ষজুড়ে। বিভিন্ন ম্যাগাজিন-পত্রিকায় ধুলোর আস্তর। নোংরা টয়লেটও ধুলো-বালিতে ভরা- যেন পরিত্যক্ত গোডাউন।
এ সেকশন দেখাশোনা করেন চারজন কর্মচারী। তবে পড়তে আসা গবেষকদের অভিযোগ, দু্’জন কর্মচারী ছাড়া বাকিদের কখনো দেখা যায় না।
কর্মকর্তারা জানান, গ্রন্থাগারের তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে জনবল সংকট তীব্র। লাইব্রেরিতে অনেক কাজ, কিন্তু দুই সেকশন মিলিয়ে মাত্র ১৫ জন কর্মী কাজ করেন। এর মধ্যে পরিচালক, দু’জন উপ-পরিচালক, দু’জন সহকারী লাইব্রেরিয়ান ও দু’জন কর্মকর্তা। বাকিরা দাফতরিক কাজে সহায়তা করেন। জনবল সংকটের কারণে বই গোছানো থাকে না, মেঝেতে পড়ে থাকে। আলমারি ও তাকের অভাব রয়েছে। বইয়ে ধুলো পড়ে নষ্ট হচ্ছে, দেখাশোনার লোক নেই।
তিনটি পদ খালি থাকলেও টাকার অভাবে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান তারা।
সহকারী লাইব্রেরিয়ান কাজী জাহিদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে সাধারণত বাংলা সাহিত্য ও ভাষার ওপর যারা গবেষণা, এমফিল, পিএইচডি করছেন, তারা আসেন। মাঝে মাঝে সারাদিনে দু’জন পড়তে আসেন। আবার কোনোদিন ২০ থেকে ২৫ জনের বেশিও হয়। তখন সামলানো সমস্যা হয়। বই খুঁজে পেতে দেরি হয়, লোক পাওয়া যায় না, পাঠকরাও বিরক্ত হন’।
‘এছাড়া পাঠকরা অনেক বই চান, যা আমরা দিতে পারি না। তখন কোথায় পাওয়া যাবে, দেখিয়ে দেই’।
প্রতি বছর গ্রন্থাগারের খরচ বাবদ মাত্র ২ থেকে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায় বলেও জানান তিনি।
জনবল ও অর্থ সংকটের কথা স্বীকার করে বাংলা একাডেমির উপ-পরিচালক (গ্রন্থাগার) সরকার আমিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখানে অনেক সমস্যা রয়েছে, উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। ডিজিটাল করার প্রস্তাবও করা হয়েছে। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা জনবল ও অর্থ সংকট। এ কারণে গ্রন্থাগারের উন্নয়নে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না’।
আরও খবর...
** খুলনা বিভাগীয় গণগ্রন্থাগারের দুর্দশা চরমে
** ময়মনসিংহের আলোর পাঠশালায় দু’দিন তালা!
** বরিশাল গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষও বেহাল!
** গরুর অভ্যর্থনা মৌলভীবাজার গণগ্রন্থাগারে!
** ফেনীর পাবলিক লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে জম্পেশ আড্ডা
** মানিকগঞ্জ সরকারি গণগ্রন্থাগার কুকুরের বিচরণক্ষেত্র!
** সপ্তাহে ৩ দিনই ছুটি দিনাজপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে!
** জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রে বই আছে, পাঠক নেই!
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৭
এমসি/এএসআর