ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

পথের পাঠশালায় প্রেরণার গল্প

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৬ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৭
পথের পাঠশালায় প্রেরণার গল্প খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে চলছে পাঠদান। ছবি- সোলায়মান হাজারী ডালিম

ফেনী: বাবা-মায়ের কাছ থেকে চেয়ে আনা নাস্তার টাকা দিয়েই চলছে পথশিশুদের খাওয়ার ব্যবস্থা। একইসঙ্গে প্রখর রোদে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে চলছে পাঠদান। ফেনী পাবলিক লাইব্রেরি আঙিনায় পথের পাঠশালার চিত্র এমনই।

কলেজের একদল শিক্ষার্থী নিজেদের প্রয়াসে এ পাঠশালার মাধ্যমে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন প্রায় অর্ধ শতাধিক পথশিশুর মধ্যে। এ যেন সমাজ পরিবর্তনের আরেক প্রেরণাদায়ক গল্প।

পাঠশালার গল্পের শুরুটা গতবছরের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে। ফেনী সরকারি কলেজের বাংলা সাহিত্যের শিক্ষার্থী ফাহাদ, হ্যাপী, নুসরাত, আরিফ। চার বন্ধু ক্লাস করে বের হওয়ার সময় দেখেন এক পথশিশু কলেজের এক শিক্ষার্থীর খাতা নিয়ে কিছু লিখতে চেষ্টা করছে। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী বিরক্ত হচ্ছেন। পথশিশুটি বললো- ‘দেন না আমি আপনার নামটা লিখে দেই’।
খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে চলছে পাঠদান।  ছবি- সোলায়মান হাজারী ডালিম
সেই থেকেই এ বোধের সৃষ্টি। পরের দিন নিজেদের ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে বন্ধুদের আহ্বান জানান তারা। ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয় স্বপ্নবাজ বন্ধুদের প্রাণের পথের পাঠশালা।   

কথা হয় পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ফেনী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ফখরুল ইসলাম ফাহাদের সঙ্গে। তিনি শোনালেন সফলতার গল্প। পথশিশু মামুন (৭) ফেনী রেলওয়ে স্টেশনে ভিক্ষা করতো। গত চারমাস সে পথের পাঠশালায় পড়ছে, এখন সে বাংলা বর্ণমালা লিখতে জানে, পড়তে জানে নিজের নাম। ইংরেজি বর্ণমালাও সে জানে।

পূর্ণিমা (৮) সেও মানুষের কাছে হাত পাততো। এখন সে বাংলা-ইংরেজি সব বর্ণমালা মুখস্ত জানে। অপর ছাত্রী সুলতানা পথের পাঠশালার গণ্ডি পেরিয়ে এখন শহরের সহদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে। আবদুর রহমান (১০) শুক্কুর (১৩) ও রাবেয়া (১৪) তারা নিয়মিত নেশা করতো। এখন তারা পাঠশালার নিয়মিত শিক্ষার্থী। ফাহাদ জানান, তাদের পাঠাশালায় এখন ৫৫ জন শিক্ষার্থী। পাঠদানের জন্য কাজ করছেন ৩২ জন স্বেচ্ছাসেবী।
খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে চলছে পাঠদান।  ছবি- সোলায়মান হাজারী ডালিম
তিনি জানান পাঠশালা নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা। শুধু পথশিশুদের নয়, এ শহরের নিরক্ষর মানুষদের সাক্ষরজ্ঞান করার স্বপ্ন রয়েছে তাদের। আর তার জন্য কাজও শুরু হয়েছে।

ফাহাদ বলেন, খোলা আকাশের নিচে রোদে দাঁড়িয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াতে আমাদের সব সদস্যদের ভীষণ কষ্ট করতে হয়। স্থানীয় প্রশাসন ও বিত্তবানরা যদি একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিতেন তাহলে শিক্ষার্থীদের পড়াতে সুবিধে হতো।

পাঠশালার ব্যয় নিয়ে তিনি জানান, শিক্ষার্থীরা নিজের পকেটের নাস্তার টাকা দিয়েই পাঠশালা চালান। এ কাজে যদি শহরের বিত্তবানরাও এগিয়ে আসেন তাহলে তা আরও সম্প্রসারিত করা যাবে। সম্প্রতি ফেনী জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসান পাঠশালা পরিদর্শনে আসেন। তিনি পাঠাশালায় সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে চলছে পাঠদান।  ছবি- সোলায়মান হাজারী ডালিম
ফেনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানা জানান, এটি খুব ভালো উদ্যোগ। এ উদ্যোগের মাধ্যমে শহরের সব নিরক্ষর মানুষকে সাক্ষরজ্ঞান করা সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৭
এসএইচডি/আরআর/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।