নাটোর জেলার মধ্যে লালপুর-গুরুদাসপুর উপজেলা লিচুর জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত। গুরুদাসপুরে বসে সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার।
দুপুর দুইটার দিকে স্টেশন বাজারে সরেজমিনে গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ী নূরচান মিয়া জানান, এখনতো বেচা-কেনা প্রায় শেষের পথে। শুরু হয় ভোর ছয়টায়। ওই সময় এই এলাকার রাস্তায় লিচুর ঝুড়ির লাইন পড়ে যায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজারে লিচুর সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও এবার নাটোর সদরে লিচুর ফলন তেমন ভালো হয়নি। মুকুল থেকে লিচুর কুঁড়ি মেলার সময় ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লিচু গাছগুলো। এ কারণে ফলন কমে গেছে প্রায় অর্ধেক। তবে নাটোরের আশপাশের এলাকায় ফলনের ক্ষতি না হওয়ায় এর প্রভাব খুব একটা বেশি পড়েনি বাজারে। এ বাজারের লিচুর বেশিরভাগই আশপাশের উপজেলাগুলো থেকে আসা।
হাতে লাল টকটকে লিচু নিয়ে ক্রেতাদের ডাকছেন বিক্রেতা রুবেল মিয়া। সকাল বেলার হাটে পাইকারি ব্যবসার পাশাপাশি সারাদিন খুচরাও বিক্রি করেন তিনি।
তিনি জানান, নাটোরের বাজারে মূলত তিন জাতের লিচুর চল বেশি। এগুলো হলো- চায়না থ্রি, বোম্বাই ও মোজাফফর। এর মধ্যে চায়না থ্রি’র দাম ও চাহিদা অনেক বেশি। দাম অপেক্ষাকৃত কম হওয়ায় বোম্বাই বা মোজাফফর লিচুর চাহিদাও একেবারে কম নয়।
বিভিন্ন দোকানের বিভিন্ন জাতের লিচু চেখে দেখা গেছে, লাল টুকটুকে গায়ের রংয়ের বোম্বাই লিচুগুলোর স্বাদ ও আকর্ষণই আলাদা। দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি খেতেও খুবই ভালো। তবে গায়ের রং খুব একটা আকর্ষণীয় না হলেও খেতে খুবই সুস্বাদু চায়না থ্রি লিচু। এর পুরোটাই যেন শাঁস। ভেতরের বিচিটাও ছোট, বাদামের সমান। ওই বিচি বাদে পুরো লিচুটাই রসালো শাঁসের।
স্বাদে কম যায় না দেশি জাত মোজাফফরও। ততোটা মিষ্টি না হলেও দেশি স্বাদটা পাওয়া যায় এ লিচুতেই। টকও নয়, আবার মিষ্টিও খুব বেশি না হওয়ায় একসঙ্গে খাওয়া যায় বেশ কয়েকটি। স্থানীয় ক্রেতাদের মধ্যেও তাই বোম্বাইয়ের চেয়ে মোজাফফর কেনার ঝোঁক বেশি।
নাটোরে বাজারে প্রতিশ’ বোম্বাই লিচু বিক্রি হচ্ছে ভালোটা দুইশ’ টাকা। কিছুটা নিম্নমানের বোম্বাই লিচু বিক্রি হচ্ছে এমনকি ১শ’ টাকা প্রতিশ’ হিসেবেও। মোজাফফর লিচু ভালোটা দুইশ’ বিশ টাকা আর চায়না থ্রি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা প্রতিশ’ হিসেবে।
মৌসুমি ফলগুলোর মধ্যে লিচুর স্থায়িত্ব সবচেয়ে কম। মধু মাসের ফলের মধ্যে বাজারে পুরোদমে সবার আগে ওঠে নাটোরের লিচু। তবে ১৫ দিন থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় নাটোর-পাবনার লিচুর পুরো মৌসুম।
লিচু বিক্রেতা মোস্তফা জানান, আর বড়জোর সাতদিন। এর মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে নাটোরের স্থানীয় লিচু। তবে এরপরেও বাজারে থাকবে দিনাজপুরের লিচু। দিনাজপুরের লিচু একটু দেরিতে বাজারে ওঠে।
নাটোরের স্থানীয় ফলন ভালো না হলেও পাবনাসহ আশপাশের এলাকাগুলোর ফলন ভালো হওয়ায় দাম ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই আছে বলেও জানান তিনি।
২শ’ মোজাফফর লিচু কিনে ক্রেতা শামসুল জানান, স্থানীয় জাত হলেও মোজাফফর লিচুর স্বাদ কম নয়। তাই তার পছন্দ মোজাফফরই।
বিক্রেতারা জানান, মূলত আত্মীয়-স্বজন কিংবা মেয়ে-জামাই বাড়িতে পাঠাতে মানুষ চায়না থ্রি কিনছেন। সুন্দর রংয়ের কারণে বোম্বাই লিচুও কিনছেন অনেকে। তবে যারা নিজেদের খাওয়ার জন্য কিনছেন, তাদের পছন্দ মোজাফফর।
তবে বিক্রেতা নূরচান বলেন, আসলে স্বাদ কোনোটারই কম নয়। যার যেটা পছন্দ আর কি।
** চামড়া কিনছে না ট্যানারি, হাহাকার নাটোরের চামড়ার হাটে
** আহ বৃষ্টি!, কি যে স্বস্তি!
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১৭
আরআই/এএসআর