তাকে যশোরের একটি সড়কে হানিফ পরিবহনের ওই বাস থেকে উদ্ধারের পর টিকিট নিয়ে দেখা যায়, সেখানে যাত্রীর নামের জায়গায় ‘মি. গফুর’ লেখা।
সোমবার (৩ জুলাই) দিনগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৯৮০১ সিরিয়ালের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) বাসটির আই-৩ সিট থেকে উদ্ধার হন ফরহাদ মজহার।
বাসটির সুপারভাইজার হাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা শিববাড়ি থেকে নিজেকে মিস্টার গফুর পরিচয় দিয়ে টিকিট কিনে বাসে ওঠেন ফরহাদ মজহার।
তিনি জানান, রাত ৯টা ১৫ মিনিটে খুলনার শিববাড়ি মোড় থেকে বাসটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়। পথে ফুলতলা পার হলে টিকিট চেক করতে গিয়ে দেখেন ওই যাত্রী ঘুমিয়ে আছে। এর কিছুক্ষণ পরে সুপারভাইজারের মোবাইলে ফোন করে পুলিশ চেহারা ও পোশাকের বিবরণ দিয়ে এ ধরনের যাত্রী গাড়িতে আছে কিনা জানতে চায়। তখন হাফিজুর মিলিয়ে জানালে গাড়ি সড়কে নওয়াপাড়ায় থামাতে বলা হয়। সেই কথা মতো নওয়াপাড়ার ভাঙ্গাগেট এলাকায় গাড়ি থামালে পুলিশ তল্লাশি করে ফরহাদ মজহারকে নামিয়ে নিজেদের জিম্মায় নেয়।
ফরহাদ মজহারের পাশের সিটের যাত্রী ঢাকার বায়িং হাউজে চাকরিরত খুলনার দৌলতপুর এলাকার বাপ্পী বাংলানিউজকে বলেন, তিনি বাসে ওঠার সময় পাশের সিটের যাত্রী (ফরহাদ মজহার) ঘুমিয়ে ছিলেন। অল্প আলোর কারণে চিনতে পারেননি। তবে পুলিশ যখন তাকে বাস থেকে নামিয়ে নেয় তখন তিনি চিনতে পেরেছিলেন।
আরেক যাত্রী শরিফুল ইসলাম জানান, তিনি ও ফরহাদ মজহার একই কাউন্টার থেকে বাসে উঠেছেন। তিনি প্রথমেই তাকে চিনতে পেরেছেন। পরে পুলিশ ও র্যাব তাকে নিয়ে গেছে।
ওই বাসটি যশোরের মণিহার স্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে। এই গাড়িতে বসেই সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) আনিসুর রহমান। তিনি বাংলানিউজকে জানান, পুলিশ হেডকোয়ার্টারের তথ্য অনুযায়ী অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে অভয়নগর থানা পুলিশ নওয়াপাড়ায় হানিফ পরিবহনের এসি বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধার করে। তাকে বাস থেকে নামিয়ে নেওয়ার পরই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় র্যাবের টিম। র্যাব সদস্যরা পুলিশের কাছ থেকে তাকে নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা দেন।
পুলিশ সুপার আরও জানান, ফরহাদ মজহার খুলনার শিববাড়ি কাউন্টার থেকে নিজেই ঢাকার টিকিট কাটেন। গাড়িতে তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন।
সকালে ফরহাদ মজহারকে ঢাকার আদাবরের নিজ বাসা থেকে ডেকে নিয়ে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী আদাবর থানায় একটি জিডি লিপিবদ্ধ করা হয়।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ফোনের অবস্থান শনাক্ত করে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারে খুলনা মহানগরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তল্লাশি চালায় র্যাব-৬। সেখানে তাদের অভিযান চলাকালে নিউমার্কেট এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে সাড়ে ৮টার দিকে ফরহাদ মজহারকে দেখতে পাওয়ার খবর মেলে। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে আর পায়নি।
১১টার দিকে খুলনায় উদ্ধার-অভিযান স্থগিত ঘোষণার আধঘণ্টা পর অভয়নগরে ফরহাদ মজহারকে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৭
এইচএ/