রাস্তাঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, ফুটপাতসহ বিভিন্ন স্থানে জনসম্মুখে ধূমপান করা যেন সাধারণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পাশে থাকা নারী-শিশুসহ অধূমপায়ীরা।
রাজধানীর নিম্ন আদালতপাড়ায় সরেজমিনে দেখা গেছে, পোশাক পরিহিত অবস্থায় জনসম্মুখেই ধূমপান করছেন দুই পুলিশ সদস্য। তাদের আশপাশে অনেকেই হাঁটাচলা করছেন, আবার কেউ বসে আছেন।
রাজধানীর তোপখানা রোডের প্রেসক্লাব পয়েন্টের সামনে দেখা গেছে, দুই পুলিশ সদস্য পোশাক পরিহিত অবস্থায় ফুটপাতের পাশের টং দোকানে বসে ধূমপান করছেন। এর পাশে অনেকেই বাসের জন্য দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন।
এরকম চিত্র হরহামেশাই দেখা যায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, পাবলিক প্লেসে ধূমপান করার বিরুদ্ধে আইন আছে। তবে শুধু আইন প্রয়োগ করে তা বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
বিভিন্ন সময় জনসম্মুখে ধূমপানবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও তা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. অজিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রকাশ্যে ধূমপান করা অপরাধ নয়, তবে পাবলিক প্লেসে ধূমপান দণ্ডনীয় অপরাধ।
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের কার্যক্রম আরও গতিশীল হলে পাবলিক প্লেসে ধূমপান অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
আইনে বলা আছে, শুধু ধূমপানকারীর নয়, পাবলিক প্লেসের মালিক ও পরিবহনের মালিকেরও জরিমানার বিধান আছে। তারা সতর্কতামূলক নোটিশ বাংলা এবং ইংরেজি ভাষায় প্রদর্শন করার ব্যবস্থা করবেন৷
কোনো পাবলিক পরিবহনের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক, নিয়ন্ত্রণকারী বা ব্যবস্থাপক এ বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনধিক এক হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং উক্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দণ্ডের দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন।
এদিকে, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ এর (১) ধারা ৭ এর বিধানে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপান করতে পারবেন না৷
কোনো ব্যক্তি এই বিধান লঙ্ঘন করলে তাকে অনধিক তিনশ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডনীয় করা হবে এবং একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার বা পুনঃ পুনঃ একই ধরনের অপরাধ করলে তিনি পর্যায়ক্রমিকভাবে এর জন্য দ্বিগুণ হারে দণ্ডনীয় হবেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা দক্ষিণ জোনের সহকারী পরিচালক (এডি) মো. শামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ধূমপান মাদকাসক্তের ‘গেটওয়ে’ (প্রবেশদ্বার) হিসেবে কাজ করে। এখন পর্যন্ত যেসব মাদকাসক্ত পাওয়া গেছে এদের সবাই কোনো না কোনোভাবে ধূমপান থেকেই নেশার জগতে প্রবেশ করেছে।
তিনি বলেন, তামাক বা ধূমপান মানুষের মধ্যে এক প্রকার নেশা তৈরি করে, যার জন্য ধীরে ধীরে এক সময় তারা নেশাগ্রস্ত হতে শুরু করে। মদ, গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবন করতে শুরু করে।
এর জন্য আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
এসজেএ/আরআর