ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের (ঢাবি) পাশে হাকিম চত্বরে ফেরি করে সিগারেট বিক্রি করছিলেন রাকিব। সকাল থেকে বিক্রি করেছে ৬শ থেকে ৭শ টাকার সিগারেট।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, শুধু রাকিব নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রায়ই শতাধিক ভ্রাম্যমাণ সিগারেটের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে যদি প্রতিদিন হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত সিগারেট বিক্রি হলে এর পরিমাণ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
২০১৬ সালের ২১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে ধূমপান নিষিদ্ধ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নেওয়া এমন উদ্যোগে ধূমপান কমার কথা থাকলেও আদতে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। গেল বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সিগারেটের দোকান ছিল একটি। এ বছর সেখানে নতুন করে বসানো হয়েছে আরও দু’টি সিগারেটের দোকান।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের আশপাশে, মধুর ক্যান্টিন, ডাকসু, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, সামাজিক বিজ্ঞান চত্বর, হাকিম চত্বর, টিএসসি, ভিসি চত্বর, মল চত্বর, মুহসীন হলের মাঠ, কার্জন হল, মোতাহার হোসেন ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ একাডেমিক ভবনের আশপাশে একাধিক সিগারেটের দোকান গড়ে উঠেছে।
হলের ভিতরেও ইচ্ছেমতো চলে ধূমপান। এতে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হন অধূমপায়ী শিক্ষার্থীরা। হল ও ক্যাম্পাসের পথে ঘাটে হঠাৎ নাকে মুখে লাগা সিগারেটের ধোঁয়া বিরক্তির সঙ্গে এনে দেয় অসুখের জীবাণু। অনেক সময় এ নিয়ে মারামারি গণ্ডগোলও বাঁধে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাডেমিক ভবনে ধূমাপান নিষিদ্ধ ও ভবনের বাইরের এলাকায় সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। একাডেমিক ভবনে ধূমপান করার খবর আমার কাছে নেই। বর্তমানে অভিযান বন্ধ থাকার কারণে ক্যাম্পাসে সিগারেট বিক্রি বেড়েছে। আমরা শিগগিরই অভিযান শুরু করবো।
হলগুলোর দোকানেও সিগারেট বিক্রি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীম উদ্দীন হলের সাত-আটটি দোকানের মধ্যে চারটি-পাঁচটিতে সিগারেট পাওয়া যায়। এছাড়া বিজয় একাত্তর হলের সামনে, বঙ্গবন্ধু হল, জিয়া হল, সূর্যসেন হলসহ সবকটি হলে সিগারেট বিক্রি হয়। উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান করায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে ধূমপায়ীর যে ধরনের ক্ষতি হয় সিগারেটের ধোঁয়ার কারণে অন্যদেরও ক্ষতি হচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায় হলের দোকানে সকালবেলা নাস্তা করছি এমন সময় অন্যজন ধূমপান করছে, তখন খুব বিরক্ত লাগে। আমি ধূমপান না করেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ঢাবির একজন সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে ধূমাপায়ীদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে অন্যের কষ্ট না হয়।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ধারণার সঙ্গে যায় না এমন কিছু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মেনে নেবে না। ধূমাপান নিষিদ্ধের আইন এখনও রয়েছে। একাডেমিক ভবন ও প্রশাসনিক ভবনে এখন ধূমপান করতে দেখা যায় না। তবে ভবনের বাইরে সিগারেট বিক্রির বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৭
এসকেবি/এএ