ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

হর্ন আর গাড়ির শব্দে দিশেহারা তেজগাঁওয়ে শিক্ষার্থীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৭
হর্ন আর গাড়ির শব্দে দিশেহারা তেজগাঁওয়ে শিক্ষার্থীরা হর্ন আর গাড়ির শব্দে দিশেহারা তেজগাঁওয়ে শিক্ষার্থীরা-ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা

ঢাকা: ঢাকার রাস্তায় গাড়ির ভেঁপুর (হর্ন) শব্দে কান পাতা দায়। দেখেশুনে মনে হয় চালকেরা যেন কে কতো বেশি আর জোরে হর্ন বাজাতে পারেন তারই অঘোষিত প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। দিন বা রাত বলে কথা নেই। ২৪ ঘণ্টাই তারা হর্ন বাজিয়েই চলেছেন। হোক তা কোনো বাজার, শপিং মল অথবা গুরুত্বপূর্ণ ও সংরক্ষিত এলাকা, অথবা হোক স্কুল বা হাসপাতাল কোনো বাছবিচার না করেই চলছে কানফাটা শব্দে একদমই বিনা প্রয়োজনে হর্ন বাজানোর অত্যাচার। 

শব্দ দূষণ(নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালায় গাড়িতে হাইড্রোলিক হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ। অথচ মালিকরা গাড়িতে তা দেদারসে বসাচ্ছেন আর চালকেরাও নিষেধের বা আইনের তোয়াক্কা না করে বাজিয়ে চলেছেন হর্ন।

অবশ্য এজন্য জরিমানাও সামান্য। নিষেধ অমান্য করার জন্য কারীর জরিমানা মাত্র ১’শ টাকা। তবে সেটাও দেওয়া লাগে না। বেশি জোরে বা অনাবশ্যক হর্ন বাজানোর জন্য চালকদের শাস্তি দেবার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ বরাবরই উদাসীন। আর এজন্যই চালকেরা ডেসিবলের মাত্রা ছাড়িয়ে অবিরাম হর্ন বাজিয়ে চলেন। কারণ তারা জানেন এজন্য তাদের শাস্তি পেতে হবে না। ফলে হর্ন বাজানোকে তারা এক প্রকার বিনোদন হিসেবেই নিয়েছেন। এতে করে শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছে মানুষ।

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বা সংরক্ষিত এলাকা যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, হাসপাতালের পাশের রাস্তাগুলোতেও হর্ন বাজানো বন্ধ হয় না। হাসপাতাল ও স্কুল-কলেজের নীরব শান্ত পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। পাঠদান ও পড়াশুনার ব্যাঘাত ঘটছে, হাসপাতালে রোগীরা শব্দ-পীড়নের শিকার হচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, শব্দদূষণ যেকোনো মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এতে সবচে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। আর এ কারণেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে শব্দদূষণ জনিত বিভিন্ন রোগ বাড়ছে বলে জানা গেছে।

বুধবার (১৯ জুলাই) রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটের অদূরে তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শব্দদূষণের ফলে শিক্ষার পরিবেশ এখানে দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে এই বিদ্যালয়ে ১ম থেকে ১০ শ্রেণী পর্যন্ত ২১’শ ৩০ জন ছাত্রী অধ্যয়নরত। এরা সবাই চরম শব্দদূষণের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

শব্দদূষনের ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষদের যেমন পাঠদানে সমস্যা হচ্ছে, অন্যদিকে ছাত্রীরাও প্রচন্ড শব্দের কারণে ক্লাসের পড়ায় মনোযোগী হতে পারছে না। আবার পরীক্ষার সময় তাদেরকে আরো বেশি সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানায় ছাত্রীরা।

বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী মাহিম হোসেন এবং মিম জানায়, ক্লাসে স্যারদের কথা শোনাই যায় না। স্কুল থেকে ফেরার পর মাথাব্যথা করে, ওই সময় কোনো কিছুই ভালো লাগে না।

তারা জানায়, বেশি সমস্যা হয় পরীক্ষার সময়। পরীক্ষার হলে তাদের মনোযোগ নষ্ট হয়ে যায়। বাসা থেকে যেটা তারা পড়ে আসে, কানফাটা শব্দের অত্যাচারে তা অনেক সময় ভুলে যায়। ’

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গোলাম কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বাইরের গাড়ির শব্দ আর হর্নের কারণে আমরা অতীষ্ঠ। অনেক শিক্ষক তো এখান থেকে চলে যাওয়ার কথাও ভাবছেন।

তিনি বলেন, প্রচন্ড শব্দের কারণে ক্লাশে পাঠদানে সমস্যা হয়। এতে বাচ্চাদের এবং আমাদের শ্রবণ শক্তি লোপ পাচ্ছে।

সম্প্রতি এই শিক্ষক বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের অ্যাজমার সমস্যা নিয়ে একটি জরিপ করেন। তিনি বলেন, জরিপে দেখা গেছে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে বাচ্চারাদের মাঝে অ্যাজমার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কথা হয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রেবেকা সুলতানার সাথে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি চলতি মাসের ২ তারিখে এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেছি।

শব্দদূষণের কথা বলতেই তিনি বলেন, এটা এখানে সব থেকে বড় সমস্যা। বাচ্চারা গাড়ির শব্দে না পারছে ক্লাস করতে, না পারছে একে অন্যের সাথে কথা বলতে। আমরাও আছি মহাবিপদে। তবে বিদ্যালয়ের ভবনে থাই-গ্লাস লাগানোতে শব্দ কিছুটা কমলেও সমস্যা থেকেই গেছে। আমি সিটি করপোরেশন এবং বিআরটিএ’র কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি যাতে তারা বিদ্যালয়ের সামনে হর্ন বাজানো বন্ধের ব্যবস্থা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৭
এসআইজে/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।