ক্রমাগত শব্দদূষণের প্রভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয় বলে তা স্বাভাবিক জীবনধারায় ব্যাঘাত ঘটায়। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা, ইউনিসেফ এবং বিশ্বব্যাংক পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রায় ৩০টি কঠিন রোগের উৎস ১২ রকমের পরিবেশ দূষণ।
স্বাভাবিক মানুষের শব্দের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ ডেসিবল। কিন্তু রাজধানী ঢাকায় যানবাহনের উচ্চ শব্দ ও হাইড্রোলিক হর্নের শব্দের মাত্রা ১২০ থেকে ১৮০ ডেসিবল পর্যন্ত হয়ে থাকে। স্বাভাবিক মানুষজন এ মাত্রার শব্দ সহ্য করতে পারলেও রোগীদের পক্ষে তা একেবারেই অসম্ভব।
রাজধানীর বেশিরভাগ হাসপাতাল এই দূষণের আওতার মধ্যে। অথচ এগুলোর ব্যাপারে নেই কোনো নজরদারির ব্যবস্থা।
বুধবার(১৯ জুলাই) রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল শব্দদূষণের নাজুক পরিস্থিতি। শাহবাগ মোড়ে রাস্তার দু’পাশে দুটি দেশখ্যাত হাসপাতাল। একপাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। অপর পাশে বারডেম জেনারেল হাসপাতাল। কিন্তু কোনো ভ্রুক্ষেপ ছাড়াই গাড়ির তীব্র হর্ন এখানে প্রতিনিয়ত বেজেই যাচ্ছে। তাই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে এখানকার রোগীরা।
বারডেম হাসপাতালে যেন ভোগান্তির পরিমাণটা একটু বেশি। বারডেমে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে ভর্তি আছেন নিহারিকা চৌধুরী।
তার ভাষ্যমতে, “আইসিইউতে যতদিন ছিলাম, ভালো ছিলাম। এখন ওয়ার্ডে আসার পর থেকে নিজেকে অনেক বেশি অসুস্থ মনে হয় শুধু বাইরের বিরক্তিকর প্রচণ্ড শব্দের কারণে। এই উচ্চণ্ড শব্দ খুব কানে লাগে ঘুমানো যায় না। রাত ১১টার পর একটু শান্তি পাই। তাও মাঝে মাঝে হঠাৎই মাঝরাতেও দুই একটা বিকট হর্নের শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। ”
এ রকম অভিযোগ হাসপাতালটির বেশিরভাগ রোগীর। অনেক সময় কানে তুলা গুঁজে রেখে দিন কাটান রোগীরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি রোগীদের অনেকে জানান একই কথা।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ব্রিগে. জেনা. মোঃ আবদুল্লাহ আল হারুণ বলেন, “হার্টের রোগী ও অপারেশনের রোগীদের সমস্যাটা সবচেয়ে বেশি হয়। স্বাভাবিকভাবে সাধারণ মানুষদের চেয়ে রোগীরা অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকেন সবসময়। তাই শব্দদূষণ তাদের একেবারেই সহ্য হয় না। আমরা হর্ন বাজানো যাবে না এমন চিহ্ন রাস্তায় লাগিয়েছি। আরও লাগাবো। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না। এ বিষয়ে সরকারকে অবহিত করেছি। আশা করি খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ”
এদিকে দেশের নামিদামি হাসপাতালগুলোতে এই ভোগান্তির পরিমাণ কিছুটা কম হলেও একেবারে যে নেই তা বলে বলা যায় না। স্কয়ার, ল্যাবএইড, আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কক্ষগুলো বাতাসরোধী ও শীতাতাপ হবার কারণে শব্দ কিছুটা কম প্রবেশ করে। তবে অন্যসব হাসপাতারের ক্ষেত্রে ভোগান্তি একেবারে শীর্ষে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় আবার ভিন্ন পরিস্থিতি। এখানে শুধু বাইরের শব্দদূষণ নয়, হাসপাতালের ভেতরেও শব্দদূষণের মাত্রাও ব্যাপক। দর্শনার্থীসহ বিভিন্ন রকম মানুষের যাতায়াতে মুখরিত এ হাসপাতালে সবার মুখের কথার কারণেই সৃষ্টি হচ্ছে শব্দদূষণ। এছাড়া হাসপাতালের গেটের ভিতরেও ঢুকে হর্ন বাজায় হাসপাতালে আগত অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য গাড়ি।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত ডাক্তার মোঃ আবিদ বলেন, প্রচণ্ড গোলমেলে শব্দের কারণে প্রায়ই দেখা যায় রোগীরা ঘুম থেকে আৎকে জেগে ওঠেন। রাস্তার শব্দ অনেক সময় রোধ করা যায় রুমকে বায়ুরোধক করার মাধ্যমে। আইসিইউতে যেমন আছে। হাসপাতালের ভিতরের মানুষের সংখ্যা কমাতে না পারলে এ সমস্যার সমাধান হবে না। আমরা মাঝেমাঝে হার্টের রোগে আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে ব্যাপক চিন্তিত হয়ে পড়ি এই শব্দ দূষণের কারণেই। ঔষধ দিয়েও কাজ হয় না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৭
এমএএম/জেএম