কিন্তু কেন চিৎকার করে কথা বলতে হচ্ছে প্রধান শিক্ষককে! বাংলাদেশ শব্দ দূষণ নীতিমালায় স্কুল-কলেজকে নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে এর ১০০ গজের মধ্যে হর্ন বাজানো সম্পূর্ণ নিষেধ হলেও তা মানছেন না চালকরা।
বাস টার্মিনাল ও মহাখালী মূল সড়কের পাশে অবস্থিত আমতলী স্টাফ ওয়েলফেয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
‘ক্লাসে টিচাররা আমাদের যখন পড়ান তখন সহজে কিছু শুনতে পাই না। গাড়ির হর্নের শব্দে কানে শুনতেও আমাদের কষ্ট হয়। মাঝেমাঝে মাথাব্যথা শুরু হয়। শুধু আমারই না, আমাদের ক্লাসের অনেকেরই এই শব্দে মাথাব্যথা হয়। কখনো কখনো ক্লাস অর্ধেক করে বাসায় চলে যেতে হয়।
কথাগুলো বলছিলো পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আশিক। আশিকের মতো একই অবস্থা স্কুলটির বাকি ৫২৮ জন শিক্ষার্থীর। অন্যদিকে শিক্ষকরা পাঠদানকালে চিৎকার করে কথা বলতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে যান। বিরক্তি আসে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে। এসব বিষয়ে একাধিকবার স্থানীয় প্রতিনিধিদের অভিযোগ করেও সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ নাসির বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে আসেন। তখন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা শব্দ দূষণের বিষয়ে তার কাছে অভিযোগ করেন। তারা ‘হর্ন বাজানো নিষেধ’ বা ‘সামনে স্কুল’ লেখা সাইনবোর্ড দেয়ার অনুরোধ করেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গত প্রায় তিন বছর আগে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী আসেন আমাদের স্কুল পরিদর্শনে। আমরা শব্দ দূষণের বিষয়টি জানাই। তাছাড়া গত ১৬ ডিসেম্বর স্থানীয় কাউন্সিলেরকেও আমাদের সমস্যার কথা বলি। এদিকে স্কুলের সামনে করা হয়েছে গ্যারেজ। গ্যারেজের শব্দে বাচ্চারা নাজেহাল। এই শব্দ দূষনের ফলে বাচ্চাদের শ্রবণশক্তি কমে যাচ্ছে। শুধু তাই না, তারা আরো নানা রকম স্নায়ুবিক রোগে ভুগছে। বারবার এসব অভিযোগ করেও কোনো ফলাফল পাইনি। তবে আমরা আশাবাদী।
স্কুলটির সামনে মহাখালীর রাস্তা পার হতে গিয়ে প্রায়ই আমাদের বাচ্চারা দুর্ঘটনার শিকার হয়। স্কুলের সামনের অংশের রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং দেয়ারও অনুরোধ করেছি আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে।
বাংলাদেশ শব্দদূষণ নীতিমালা অনুযায়ী স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত নীরব এলাকা। এসব প্রতিষ্ঠানের চতুর্দিকে ১০০ গজের ভেতরে কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না। কোনো উৎসব, সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকার, এমপ্লিফায়ার বা কোনো যান্ত্রিক কৌশল ব্যবহার করতে হলে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি লাগবে।
অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ৬০ ডেসিবেল শব্দে মানুষের সাময়িক শ্রবণশক্তি নষ্ট হতে পারে এবং ১০০ ডেসিবেল শব্দে চিরতরে শ্রবণশক্তি হারাতে পারে। অথচ রাজধানী ঢাকায় ১০৭ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ তৈরি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫১ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৭
ইউএম/জেএম