ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ ভাদ্র ১৪৩১, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৮ সফর ১৪৪৬

জাতীয়

পরীক্ষকদের ‘জবাবদিহির ভয়ে’ কমেছে পাস ও জিপিএ-৫!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
পরীক্ষকদের ‘জবাবদিহির ভয়ে’ কমেছে পাস ও জিপিএ-৫! সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ও অন্যরা- বাংলানিউজ

ঢাকা: পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতির প্রয়োগের ফলে পরীক্ষকদের জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতার আওতায় নিয়ে আসায় এবার উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
 
 

এ পদ্ধতিতে মূল্যায়নকৃত উত্তরপত্র থেকে ১২ শতাংশ প্রধান পরীক্ষক দিয়ে মূল্যায়নের ভয়ে পরীক্ষকরা অতিমূল্যায়ন বা অবমূল্যায়ন করেননি। উত্তরপত্র মূল্যায়নে সতর্কতার কারণে পাস ও জিপিএ-৫ কমে এসেছে বলে জানিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড।

আর কুমিল্লা বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের সংখ্যা কমে যাওয়ায় তা সার্বিক ফলাফলেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
 
রোববার (২৩ জুলাই) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দশ বোর্ডে মোট পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। গতবছর পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ।  
 
দশ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন, গতবছর ছিল ৫৮২৭৬ জন। এবার গত বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ কমেছে ২০ হাজার ৩০৭ জন।
 
পাসের হার ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ ও জিপিএ-৫ ২০ হাজার ৩০৭ জন কমে যাওয়ার জন্য নতুন পদ্ধতিকেই দুষছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিকেলে আমরা বসেছিলাম। মূল্যায়ন পদ্ধতিই পাস ও জিপিএ-৫ কমে আসার প্রধান কারণ হিসেবে সবাই বলেছেন।
 
প্রধান পরীক্ষক ১২ শতাংশ উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন, এ সতর্কতা মাঠ পর্যায়ের সবাই অবলম্বন করেছেন। এতে মূল্যায়ন সঠিক হয়েছে।
 
‘এবারের রেজাল্ট মেসেজ হিসেবে নেবে শিক্ষার্থীরা। আগামীতে শিক্ষার্থীরা সতর্ক হবে যে ভালো করে পড়তে হবে, লিখতে হবে। এতে রেজাল্ট ভালো হবে। ’
 
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বাংলানিউজকে বলেন, উত্তরপত্র মূল্যায়নে আমাদের নতুন পদ্ধতির কারণে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে প্রভাব পড়েছে।
 
আগে এমন কড়াকড়ি নিয়ম ছিল না বলে জানান ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার।
 
নতুন পদ্ধতি কী?

পরীক্ষা স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের জন্য ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে ‘বিএডু’ (বাংলাদেশ এক্সামিনেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিট) একটি পরীক্ষামূলক ফলাফল তৈরি করে। এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় এইচএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে।  
 
নতুন পদ্ধতি সম্পর্কে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, নমুনা উত্তরপত্র দিয়ে পরীক্ষকদের উত্তরপত্র মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে এবার। মূল্যায়নের পর ১২ শতাংশ উত্তরপত্র প্রধান পরীক্ষক মূল্যায়ন করেছেন। এতে পরীক্ষকদের দায়বদ্ধতা থাকে। যাতে কোনো শৈথিল্য করার সুযোগ ছিল না।
 
ইংরেজি ও নতুন পদ্ধতিতে ডুবেছে কুমিল্লা

কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে মোট পাসের হার ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ, গত বছর ছিল ৬৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
 
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কায়সার আহমেদ বলেন, আমাদের বোর্ডে ইংরেজিতে ৩৮ শতাংশ ফেল করেছে। অন্য কোনো বিষয়ে ৮০ শতাংশের নিচে পাস নেই। বাংলায় ৯১ শতাংশ, সামাজিক বিজ্ঞানে ৯৩ শতাংশ। ইংরেজির ফেলের সংখ্যা অন্য বিষয়ের সামান্য ফেলের সঙ্গে মিলে বড় বিপর্যয় হয়েছে।
 
‘আমরা শিক্ষকদের ডেকে জিজ্ঞাস করেছি প্রশ্ন কঠিন হয়েছে কিনা- তারা বলেছে প্রথম ও দ্বিতীয় উভয়ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড হয়েছে। ’
 
তিনি বলেন, গ্রাম পর্যায়ে ইংরেজির অবস্থা ভালো না। চাঁদপুরের বলাখাল মকবুল আহমেদ কলেজের উদাহরণ টেনে বলেন, ২৫৩ জনের মধ্যে মাত্র ২৯ জন পাস করেছে। বাকি সবাই ইংরেজিতেই ফেল।
 
‘ইংরেজিতে বিপর্যয়ের কারণেই ফল বিপর্যয়। প্রাথমিক পর্যায় থেকে ইংরেজি দুর্বল। ’
 
ইংরেজিতে ফেলের জন্য কলেজগুলোকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এরপর তাদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।
 
ফল বিপর্যয়ের আরেকটি কারণ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, এবার যেভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে তাতে সামান্য ভুল হলেও নম্বর দেওয়া হয়নি। আগে সামান্য ভুল বা অসম্পূর্ণ হলেও নম্বর পেয়েছে।
 
‘অতি মূল্যায়ন ও অবমূল্যায়ন রোধে ৭/৮ পৃষ্ঠার একটি নির্দেশনা দিয়েছিলাম। উদাসীনতার কারণে ভুল প্রশ্নে নম্বর দেওয়া বা সঠিক প্রশ্নে কম নম্বর দেওয়া সংক্রান্ত নির্দেশনা ছিল। ’
 
তিনি বলেন, ১২ শতাংশ উত্তরপত্র মূল্যায়নের শর্তের কারণে উত্তর হয়নি অথচ নম্বর দেবেন, এর কোনো সুযোগ ছিল না। এ বিষয়টা খুব ভালোভাবে বাস্তবায়ন করেছি।  
 
‘আমাদের প্রধান পরীক্ষক বলেছেন, উত্তরপত্রে এবার কোনো অসামঞ্জস্য ছিল না। ’
 
কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবদুল খালেক বাংলানিউজকে বলেন, ইংরেজিতে বেশি ফেল গোটা ফলেই প্রভাব পড়েছে। ইংরেজিতে ফেলের হার বেশি হওয়ায় মানবিক ও বাণিজ্যে পাসের হার কমেছে।
 
তবে পরীক্ষার সময় প্রশ্ন কঠিন হয়েছে- এমন কোনো কথা শোনা যায়নি বলে জানান কুমিল্লা বোর্ড চেয়ারম্যান।
 
তিনি বলেন, প্রশ্ন শিক্ষকরা করেন, তারাই মূল্যায়ন করেন। এতে আমাদের হাত নেই। তবে কারণ খতিয়ে দেখা হবে।
 
আর জেলা শহরগুলোর প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করলেও মফস্বলের কলেজগুলো কিছুটা খারাপ করেছে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, মহিলা কলেজ, কুমিল্লা সরকারি কলেজ, ফেনী কলেজ, নোয়াখালী কলেজে পাসের হার ভালো। মফস্বলের খারাপ হওয়ার কারণ তিনি বলেন, নকলমুক্ত পরীক্ষা হয়েছে।
 
নতুন পদ্ধতি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী যা বললেন

এখনো আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা গুণগত মান নিশ্চিত করা। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমাদের জেনারেল অ্যাসেসমেন্ট, আরও কারণ থাকতে পারে। পাসের হার কমেছে এতে হতবাক হওয়ার কারণ নেই।
 
শিক্ষার মানোন্নয়নে উত্তরপত্র মূল্যায়নে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ফলাফলটা সঠিক হচ্ছে কিনা- বিএডু সেটাই দেখবে।
 
কুমিল্লা বোর্ডের পাসের হার কমে যাওয়ার কারণ পর্যালোচনা করে জানানো হবে বলে জানান নাহিদ।
 
কুমিল্লা বোর্ড চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে বলেন, কোন কলেজে পাসের হার কম এবং কী কারণ তা বের করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
 
পাসের হার কমার কারণ খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৩, ২০১৭
এমআইএইচ/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ