কান্নাজড়িত ও ক্লান্তিভরা কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মুক্তামনির বাবা ইব্রাহীম হোসেন। চিকিৎসকরা মুক্তামনির অস্ত্রোপচারের সময় যা যা ভালো মনে করবেন, তারা তাই করবেন বলেও সম্মতি দেন তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামনির বায়োপসি রিপোর্টে রক্তনালীতে টিউমার ধরা পড়েছে। রোগটিকে ইংরেজিতে ‘হেমানজিওমা’ বলে এবং এটি বিরল রোগ নয় বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার ( ০৮ আগস্ট) মুক্তার চিকিৎসায় গঠিত ঢামেক হাসপাতালের ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার বায়োপসি রিপোর্ট পর্যালোচনা করে আগামী শনিবার (১২ আগস্ট) দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বার্ন ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন ও প্রধান ডা. আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী শনিবার সকালে মুক্তামনির হাতে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করা হবে। অস্ত্রোপচারের সময় তার জীবন রক্ষার্থে হাতটি কেটে ফেলা হতে পারে। তবে আমরা চেষ্টা করবো না কাটতে’।
মুক্তামনির বাবা ইব্রাহীম বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরে মেয়ের হাতের এ অবস্থা নিয়ে অনেক কষ্ট করেছি। অনেক ডাক্তার, কবিরাজ দেখিয়েছি। ভালো হওয়া দূরের কথা, রোগটা আরও বেড়েছে। হাত থেকে দুর্গন্ধ বের হতো, তাই মুক্তার সঙ্গে কেউ খেলাধুলা করতো না, কেউ কথাও বলতো না’।
‘আমার বুকের ধন (মুক্তামনি) যখন আমাকে এসে বলতো, বাবা আমার সঙ্গে কেউ খেলে না, তখন আমার বুকের ভেতরটা হু-হু করে কেঁদে উঠতো’।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে ওর এখন ভালো হওয়ার দিন এসেছে। চিকিৎসকরা ওকে সুস্থ করতে অনেক কষ্ট করছেন’।
‘আমার বুকের ধনের জীবনটা হলো সবচেয়ে আগে। হাতের জন্য ওর জীবনের যদি ঝুঁকি থাকে, তাহলে সেই হাত রাখার দরকার নেই’।
অস্ত্রোপচারের কথা জানতে পেরে মুক্তামনি বাংলানিউজকে বলে, ‘আমি ভালো হয়ে যাবো। আমি বাড়িতে গিয়ে খেলাধুলা করতে পারবো। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন’।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাশদাহ গ্রামের দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন ও আসমা খাতুন দম্পতির মেয়ে মুক্তামনি। এ রোগে তার ডান হাত ফুলে যায়। সাদা রঙের শত শত পোকা ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই ফুলে যাওয়া অংশে। শরীরের অসহ্য ব্যথা ও যন্ত্রণায় মুক্তামনি বসতেও পারে না। এরপর হাতে পচন ধরে। হাতের সঙ্গে বুকের একাংশেও ছড়িয়ে পড়েছে রোগটি। দীর্ঘ নয় বছরেও মুক্তার রোগ ধরতে পারেননি চিকিৎসকরা।
গত ০৮ জুলাই বাংলানিউজে ‘নয় বছরেও ধরা পড়েনি মুক্তার রোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয় দেশজুড়ে। এরপর অনেকেই এগিয়ে এসেছেন, সহায়তার হাত বাড়িয়েছেন মুক্তার চিকিৎসায়।
এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের নির্দেশনায় একটি প্রতিনিধি দল তার বাড়িতে গিয়ে শিশুটিকে নিয়ে আসেন। গত ১১ জুলাই ঢামেক হাসপাতালে ভর্তির দিনই মুক্তামনির চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ১৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে মুক্তামনিকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
** দ্বিতীয় দফায় মুক্তামনির অস্ত্রোপচার শনিবার
** মুক্তামনির রক্তনালীতে টিউমার!
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৭
এজেডএস/এএটি/এএসআর