ভোর ৬টা ২০ মিনিটে অনটাইমে ছেড়ে আসা ট্রেনটি যাবে নীলফামারীর সীমান্তবর্তী স্টেশন চিলাহাটি। আমাদের গন্তব্য বগুড়ার সান্তাহার।
প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু হওয়া তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য আর মিনিটে মিনিটে ভিক্ষুকের আগমন রীতিমতো যাত্রীদের জন্য অত্যাচার। এসি বগি ছাড়া ট্রেনের অন্য বগিগুলোতে হকারের আনাগোনা নতুন কিছু নয়। ভিক্ষুকও যে থাকে না, বিষয়টি এমনও নয়। কিন্তু এতোদিনের রেলভ্রমণে এমন মাত্রারিক্ত ভিক্ষুক, সাহায্যপ্রার্থী আগে চোখে পড়েনি।
তিতুমীরের বগি পুরনো। আসনগুলো বেঞ্চ সিস্টেম। কোনো এসি বগি নেই। ব্রডগেজ লাইন হওয়ায় এক সারিতে পাঁচ সিট। ট্রেন ছাড়ার আগে থেকে ভেতরে উঠে, বাইরে জানালায় দাঁড়িয়ে একের পর এক ভিক্ষুক এসে কাকুতি-মিনতি শুরু করলো। এরমধ্যে উঠলো হিজড়া হিসেবে পরিচিত তৃতীয় লিঙ্গের একদল সদস্য। তারাও আবার আলাদা হয়ে একজন একজন করে এসে যন্ত্রণা দিতে লাগলো যাত্রীদের।
পেছনের সিটে বসা এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় বসে পড়লো তার গা ঘেঁষে। পাশে সহধর্মিনী থাকায় অস্বস্তিতে পড়ে শেষতক কিছু টাকা দিতে বাধ্য হলেন তিনি। টাকা না দিতে চাইলে তুই-তোকারিসহ গালিগালাজ করতে, অশ্লীল কথা বলতেও ছাড়ে না এরা। বিষয়টি দিনের পর দিনে দেখে জেনে-বুঝেও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না রেলের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
ট্রেন ছাড়তেই একজন টাকা নিয়ে ভাগলেও আরেকজন থেকেই গেলো। দ্বিতীয়বার এসে যাত্রীদের কাছে টাকা চাইলে আগে একজন নিয়ে গেলো বলার পরও বিশ্বাস করতে চায় না। তার দাবি, ট্রেনে তিনি একাই উঠেছেন।
এই অস্বস্তিকর অত্যাচার শেষ হতে না হতেই ভিক্ষুকের আগমন জ্যামিতিক হারে। কেউ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, কেউ বয়স্ক, কেউ আবার যথেষ্ট জোয়ান। এছাড়া মেয়ের বিয়ের জন্য সাহায্য, ছেলের অসুস্থতার জন্য সাহায্য প্রভৃতি তো লেগেই রইলো। ১৩ বগির লম্বা ট্রেনটির প্রথম স্টপেজ নাটোরের আব্দুলপুর। এরপর প্রতি স্টেশনেই একের পর এক অসুবিধা জানিয়ে চলতে থাকলো ভিক্ষুকের আনাগোনা। কয়েকদল আবার গান-বাজনা, গানের সুরে দোয়া-দরুদ পড়তে পড়তেই গায়ের উপর ঝুঁকে পড়ে। কেউ কিছু বললে আবার ঝাড়ি মারে উল্টো।
খুশি মনে কেউ টাকা না দিলে মুখ বেজার করে, কখনও মুখ বাঁকিয়ে চলে যায়। এভাবে টানা আড়াই ঘণ্টার যাত্রায় ভেতর-বাইর মিলে অন্তত গোটা পঞ্চাশেক ভিক্ষুকের দেখা মিললো। এর বেশিও হতে পারে। বগি কোনো সময় ভিক্ষুকমুক্ত থাকতে দেখা গেলো না। ১শ’৪ জন ধারণক্ষমতার বগির এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত একজন শেষ না করতেই হাজির আরেকজন।
এমন অস্বাভাবিক হারে ভিক্ষুক বাড়ার কারণ বন্যা কিনা তা ঠিক বোঝা গেলো না।
তৃতীয় লিঙ্গ ও ভিক্ষুক বিষয়ে তিতুমীর ট্রেনের পরিচালক মো. আজম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কি করবো বলেন। তাদের গ্রেফতার করার কোনো আইন তো নেই। সরকারও তো কিছু করতে পারে না। এভাবে সহ্য করা ছাড়া উপায় নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
এএ