ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

রাস্তায় জ্বলছে চুলা, রাস্তায়ই খাওয়া

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
রাস্তায় জ্বলছে চুলা, রাস্তায়ই খাওয়া ছবি ও ভিডিও: আসিফ আজিজ

চর বজরা, উলিপুর, কুড়িগ্রাম: পুরনো ঘাট ডুবে যাওয়ায় নতুন করে একটি আঘাটায় ভিড়ছে সুন্দরগঞ্জ থেকে আসা নৌকাগুলো। নৌকা থেকে নেমে উত্তর দিকে চলে গেছে একটি মাটির রাস্তা। রাস্তার দু’পাশজুড়ে পাট পচার গন্ধ। আঁশ ছাড়িয়ে শুকোতে দেওয়া হয়েছে কিছু, একইসঙ্গে চলছে ছাড়ানোর কাজ। এখান থেকে উত্তর-পূর্বে যতোদূর চোখ যায় পানি আর পানি। মাঝে তিস্তা নদী এবং নদীর ওপারেও যে চর বজরা নামে একটি গ্রাম রয়েছে তা কোনোমতে বোঝার উপায় নেই।

রাস্তার পশ্চিমেও অবস্থা একই। বাড়িগুলো সব ডুবে আছে।

কয়েক হাজার পরিবারের বসবাস নদীর দুই পাড়ের গ্রামে। যাদের অধিকাংশের আবাস এখন এ রাস্তাটি। কিছুদূর এগিয়ে সেটিও ভেঙেছে পানির তোড়ে। তাহলে কীভাবে চলছে এতোগুলো মানুষের রান্না-খাওয়া। ভাবতে ভাবতেই রাস্তাটি ধরে হাঁটা। পশ্চিমদিকের পানি লাল হয়ে উঠেছে। পূর্বদিকটায় পানির ধাক্কা সরাসরি লাগতে থাকায় রয়ে গেছে ঘোলা। ঘরবাড়ি ভাসছে সে পানিতে।  
 মাটিতে বসে ভাত খাচ্ছিলেন অসুস্থ আব্দুল হাকিম, পাশে দাঁড়িয়ে তার সহধর্মিনী নূর আসমা।  ছবি: আসিফ আজিজউপরে ক’টা টিন সাঁটিয়ে নিচে চার খুঁটিতে ছাউনি তৈরি করে মাটিতে বসে ভাত খাচ্ছিলেন অসুস্থ আব্দুল হাকিম। পাশে দাঁড়িয়ে তার সহধর্মিনী নূর আসমা। এর একশো গজ দূরে তাদের টিনের ঘরে হাঁটুপানি। জিনিসপত্র মটকায় তুলে এখানেই চলছে তাদের রান্না-খাওয়া।

নূর আসমা বলেন, হামার জিনিস-টিনিস কিছু নেই। হাঁস আছিল মুরগি আছিল বন্যেয় সব মরি গ্যাচে। গরু এপার অ্যানে থুইছি। সকালকার খাবার দুপুরিত খাই, কষ্টমষ্ট করি চলি। কালকি আছিনু খাটের উপর বসি, খানিকপর খাট ডুবলি মানুষির বাড়ি আছিনু। খাওয়া-দাওয়া আস্তার উপরত হচ্ছে। ওই পাশে চুইল্যা আনছি।  
রাস্তায় জ্বলছে চুলা, রাস্তায়ই খাওয়া।  ছবি: আসিফ আজিজসোমবারের (১৪ আগস্ট) দুপুরের খাবার খেয়েছেন ছোট মাছ আর আলু ভাজি দিয়ে।
 
তিস্তার ওপার থেকে চর বজরার আমেনা বেগম। নতুন চুলা পেতেছেন। এখনও মাটি কাঁচা। বললেন, উপে নেই বাহে। কি ক্যইরবো। এতেই রান্না লাগবি। সব ডুবি গেছে।
 
বাড়ির চালে থাকা জালি কুমড়াটা পেড়ে এনেছেন। চাল আছে কিছু। অন্য জিনিসপত্র তখনও গোছাননি। কখন খাবেন তাও জানেন না। কোনো ত্রাণও পাননি।  প্রতিদিন ডুবছে নতুন নতুন গ্রাম।

রাস্তায় জ্বলছে চুলা, রাস্তায়ই খাওয়া।  ছবি: আসিফ আজিজ
আমেনা এবং নূর আসমারই নয় শুধু, রাস্তাটিতে প্রায় সব পরিবারের চিত্র এক। রাস্তায়ই চলছে রান্না, সেখানেই খাওয়া, থাকা। অসহনীয় জীবন এসব বন্যাকবলিত মানুষের। তবু চলে যাচ্ছে জীবন।
 
বাংলাদেশ সময়: ০২০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
এএ/এইচএ/

আরও পড়ুন
** গম-ভুট্টা-পাটক্ষেতের উপর দিয়ে চলছে নৌকা!
** পচা ড্রেনে ছিপ ফেলে কেজি কেজি মাছ!
** নির্বাচনী এলাকায় ‘তুলোধুনো’ এমপি দারা!
** তিতুমীরে হিজড়া-ভিক্ষুকের রাজত্ব!
** পেরেছে কলকাতা-রাজশাহী, পারলো না শুধু ঢাকা!
** ‘নির্বাচিত হলে গ্রামেও আনবো ডিজিটাল সুবিধা’
** এমপি হলে পুরো বেতন অসচ্ছল নেতাকর্মীদের দেব
** ভরসন্ধ্যায় নির্বাচনী উত্তাপ রাজশাহী মহানগর আ'লীগ অফিসে

** এই আমাদের বিমানবন্দর রেলস্টেশন!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।