ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ছিপ জালে চলছে জীবিকা!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
ছিপ জালে চলছে জীবিকা! জাল ফেলছেন আর টেনে তুলছেন, তাতেই মিলছে মাছ। ছবি: জনি সাহা

উল্যাবাজার, সাঘাটা বন্যাকবলিত এলাকা ‍ঘুরে: মূল সড়কও স্পর্শ করেছে বন্যার পানি। পা ফেলতেই বোঝা যায়, দশ হাত দূরেই তা কোমর ছোঁবে। গাঁয়ের ভেতর চলে যাওয়া সড়কের কোমর পানি ভেঙে সহায়-সম্বল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে এদিকটায় ছুটছেন বন্যাদুর্গতরা। সঙ্গে থাকছে জীবনের ‘সম্বল’ কিছু না কিছু।

যে রাস্তাটিতে পানি উঠেছে, তার পাশে ছিপ জাল ফেলে মাছ ধরছেন জনাদশেক লোক। যেন মাছ ধরার ‘উৎসবে’ নেমেছেন তারা।

তবে মূল চিত্রটা এমন নয় বলে জানান বন্যায় আশ্রয়হীন মানুষেরা। ভিটে-মাটি, অধিকাংশ সহায়-সম্বল আর ক্ষেতের ফসল বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মাছ ধরে-বিক্রি করে কোনোমতে জীবন-জীবিকা টিকিয়ে রেখেছেন তারা!
 
ভোর ৬টা থেকে ছিপ জালে (কেউ কেউ চৌকোণা জাল বলেন) মাছ শিকার করছেন আশাদুল। বেলা ১২টা নাগাদ প্রায় পাঁচ কেজি মাছ তার জালে আটকেছে। জাল ফেলছেন আর খানিক বিরতি দিয়ে তুলছেন। তাতেই উঠে আসছে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। তবে কেজি কেজি ওজনের নয়, অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির।
 
এক সপ্তাহ ধরে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার উল্যাবাজারের ভাংগা মোড় এলাকার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন যমুনার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এতে কারো কারো ঘরে বুক সমান পানি জমেছে। ঘর-বাড়ি ছেড়ে এসব মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু বন্যায় কাজ করার উপায় বন্ধ থাকায় পেট চালাতে ছিপ জালে নির্ভর হয়েছেন। এ জালে ধরা পড়া মাছ বিক্রি করেই কিনছেন বেঁচে থাকার রসদ চাল, ডাল, নুন।
উল্যাবাজারের ভাংগা মোড় এলাকার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন যমুনার পানিতে তলিয়ে রয়েছে।  ছবি: জনি সাহা
পেশায় রিকশাচালক আসাদুল তাদের একজন। বন্যায় রাস্তা-ঘাট খারাপ হওয়ায় পেট চালাতে ছিপ জাল দিয়ে মাছ ধরছেন। তিনি জানান, সোমবার (১৪ আগস্ট) দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাল বেয়ে ৫ কেজি মাছ ধরেছেন। পরে সেগুলো স্থানীয় বাজারে কেজি একশ’ টাকায় বিক্রি করেছেন।
 
মঙ্গলবারও (১৫ আগস্ট) ভোরেই নেমে পড়েছেন। বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দুই দফায় হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ ধরবেন বলেও জানান আসাদুল।
 
কেজি দেড়েক মাছ নিয়ে বাজারে ছুটছেন হাবিব উদ্দিন। রাজমিস্ত্রি হাবিবও পেটের তাগিদে ছিপ জালে মাছ টানছেন। তাতে উঠছে- ভাটা, মৃগেল, রুই, কাতল, পুঁটি, নলা, ভাগনাসহ আরো কয়েক প্রজাতির মাছ। বাজারে এ মাছ একশ’ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি।
 
কৃষক রহিমের বাড়িতেও বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তিনিও ছিপ জালে মাছ ধরছেন। তার পাশেই আরো অন্তত ১০টি ছিপ জাল নিয়ে বসেছেন এলাকার বন্যা দুর্গতরা।
 
বন্যার পানি প্রবেশ করায় সাঘাটার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন পানির নিচে রয়েছে। এতে স্থানীয় অনেকের মাছের ঘের পানিতে তলিয়েছে। মূলত সেই মাছগুলোই এখন তাদের জালে আটকাচ্ছে। তবে আসাদুল, হাবিবরা এভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে চান না। এজন্য কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ক্ষতিগ্রস্তরা।
 
জাল ফেলছেন আর টেনে তুলছেন, তাতেই মিলছে মাছ।  ছবি: জনি সাহাভাংগা বাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যাওয়ায় আমনেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নৌকা যেদিকেই ছুটছে, সেখানেই নিচে ডুবে আছে কারো না কারো স্বপ্নের ফসল। যা দিয়ে অন্তত এক মৌসুম খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার ‘স্বাভাবিক’ জীবনযাপনের স্বপ্ন ছিলো এসব মানুষদের।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
জেডএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।