ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

‘আইজ  হামাক খাবার নেই, কাঁঠাল সিদ্ধ কইরে খাব’

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৭
‘আইজ  হামাক খাবার নেই, কাঁঠাল সিদ্ধ কইরে খাব’ আইজ  হামাক খাবা নেই, কাঁঠাল সিদ্ধ কইরে খাব

সাঘাটা, গাইবান্ধা থেকে: দুপুর সাড়ে ১২টার দিকেও চুলা জ্বলেনি শিউলিদের ঘরে। চুলা ডুবে গেছে বানের পানিতে। তিনদিন হলো গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি সব আছেন মিলেমিশে। খেটে খাওয়া মানুষ, তাই প্রতিদিনের রোজগারের উপর নির্ভর করে থাকা ছাড়া উপায় নেই। মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) দুপুরে কোনো ভাত জোটেনি। ঘরের জায়গাটি একটু উঁচু। সেখানে বসেই আধপাকা কাঁঠাল কাটছিলেন মা-মেয়ে মিলে।

পোষা ছাগল দুটি বিরক্ত করছিলো বারবার। কি করবে চারিদিকে পানি।

ঘাস-পাতা খাওয়ার জায়গা নেই। পেটে তো তাদেরও ক্ষুধা কম নয়। তাই পরিবারের জন্য প্রস্তুত করা কাঁঠালে তারও ভাগ চাই। পাশে বসা শিউলি ছোট্ট মেয়ে রজিনা। বয়স দুই বছর। ক্ষুধায় আধপাকা কাঁঠালই বসে বসে কামড়ে খাচ্ছিলো।

শিউলি মা ছমিরন। মেয়ের সঙ্গে কাটছিলেন কাঁঠাল। জানতে চাইলে বলেন, কি করবো বাবা আইজ হামাক ঘরে খাবার নেই। সাতজন মানুষ পরিবারে। দুটো ছাগল আছে, হাঁস-মুরগি আছে। পাশের বাড়ির একজন এই কাঁঠালটি খেতে দিলো। দুপুরে পানি দিয়ে, নুন হলদি দিয়ে সিদ্ধ করে খাবো।
আইজ  হামাক খাবা নেই, কাঁঠাল সিদ্ধ কইরে খাব
 শুধু কাঁঠাল সিদ্ধ করে খাওয়া যায়, তাও আবার এই আধপাকা কাঁঠাল? এবার বলেন, কেন খাওয়া যাবে না। আর কিছু ঘরে নেই। চাইল নেই। এই খাইয়েই আমাদের কাটাতি হবি। রাতে কি হবে জানি না। বড়ই কষ্টে আছি।
 
রান্না করে যে কাঁঠাল খাওয়া হয় সেটাকে ইঁচড় বলে। মানে কাঁচা কাঁঠাল। কিন্তু এমন করে কাঁঠাল খাওয়া দেখা এটাই প্রথম। বন্যাকবলিত মানুষ যে কত কষ্ট, দুর্ভোগে দিনযাপন করছে তা এই শিউলিদের দেখলো অনুধাবন করা যায়।  
আইজ  হামাক খাবা নেই, কাঁঠাল সিদ্ধ কইরে খাবশিউলিদের ছাগল দুটিও এখন পরিবারের ঘরের সদস্যের মতো পিছন ছাড়ে না। খাবারের জন্য সারাক্ষণ আবদার করে। কাঁঠাল কাটতে থাকলে বারবার গা ঘেঁষে খাবারের চেষ্টা করছিলো। অবলা জীবকে জোর করে তাড়াতেও দ্বিধা করছিলেন মা-মেয়ে দুজনেই।

অবুঝ শিশুটি এক নাগাড়ে কাঁঠালের লাল হয়ে আসা কয়েকটি কোয়া খেয়ে ফেললো। এটা নিতান্ত ক্ষুধা মেটাতেই চিবাচ্ছিলো তার ছাপ ছিলো চোখে-মুখে।
 খাবার সংগ্রহে বন্যার্তরাগাইবান্ধার যে ১৬-১৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে তার একটি ভরতখালী উল্যাবাজারের ভাঙার মোড় পূর্ব পাড়া।  বাজারটি সম্পূর্ণ পানি নিমজ্জিত। যেখানে মানুষের পদচারণায় গমগম করতো সেখানে চলছে মাছ ধরা। আশপাশের সব নদী-পুকুর খাল-বিল এক হয়ে যাওয়ায় ছটকা জালে পড়ছে প্রচুর মাছ। এক শ্রেণীর মানুষ নির্ভর করে বেঁচে আছে সে মাছের উপর।
 
প্রতিদিন পানি বাড়ছে। তাই দলবেঁধে নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের পানিতে গলা ডুবিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরতে দেখা গেলো। কদিনের মধ্যেই যেন তাদের পরিচয় বদলে গেছে। দূরের মানুষ তাদের বলে বানভাসি, দেখতে আসে দূর থেকে।

আরও পড়ুন

**রাস্তায় জ্বলছে চুলা, রাস্তায়ই খাওয়া
** গম-ভুট্টা-পাটক্ষেতের উপর দিয়ে চলছে নৌকা!
** পচা ড্রেনে ছিপ ফেলে কেজি কেজি মাছ!
** নির্বাচনী এলাকায় ‘তুলোধুনো’ এমপি দারা!
** তিতুমীরে হিজড়া-ভিক্ষুকের রাজত্ব!
** পেরেছে কলকাতা-রাজশাহী, পারলো না শুধু ঢাকা!
** ‘নির্বাচিত হলে গ্রামেও আনবো ডিজিটাল সুবিধা’
** এমপি হলে পুরো বেতন অসচ্ছল নেতাকর্মীদের দেব
** ভরসন্ধ্যায় নির্বাচনী উত্তাপ রাজশাহী মহানগর আ'লীগ অফিসে

** এই আমাদের বিমানবন্দর রেলস্টেশন!

 
বাংলাদেশ সময়: ০০৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
এএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।