মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার উল্যাবাজারের ভাংগার মোড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বন্যাকবলিত মানুষগুলো পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রতিনিয়ত পানি বাড়ছে তাও বুঝতে পারছেন, কিন্তু ঘর ছাড়ছেন না।
মো. জামালউদ্দিনের বাড়ির চারিদিকে বন্যার পানি ভয়ংঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। বাড়ির উঠোনের পানিতে নৌকার ঠেলে দেওয়া ঢেউ খেলা করছে, কিন্তু ঘর ছাড়ছেন না। নৌকা থেকে চিৎকার করে প্রশ্ন করতে বলেন, কোথায় যাবো, অন্য জায়গায় যাওয়ার তো সামর্থ্য নেই।
তার কথা শুনে অন্দরমহল থেকে গৃহিণীও গলা বাড়িয়েছেন। ‘এক সপ্তাহ ধরে বানের পানিতে আটকা পড়েছি। আমাদের তো কোথাও যাওয়ার কোনো উপায় নেই। ’
প্রতি বছরই বানের পানিতে বন্দি হন। তাই বিষয়টা স্বাভাবিক ভেবেই এখনো বাপ-দাদার ভিটায় অবস্থান করছেন। তবে এবারের যমুনার আগ্রাসন অন্যবারের চেয়ে বেশি বলে জানান জামাল উদ্দিন।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পানিতে ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কায় গরু-হাঁস-মুরগিগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। বাদ পড়ছেন না ঘরের বৃদ্ধ মানুষটিও। অনেকে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
বানের পানি ভেদ করে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ছুটছে। নিচে আমন-বোরো ধান ক্ষেত। সামনে-পেছনে যেখানেই দু’একটি ঘর দেখা যায় সবগুলোই বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। বাড়ি থেকে খানিক দূরে যেখানে বাসিন্দারা শৌচাগার স্থাপন করেছিলেন কোথাও সেগুলোর মাথায় পানি ঠেকেছে। ঘরের কোনো কাপড় শুকাতে দেওয়ায় বোঝা যাচ্ছে এখনও তারা ভেতরে অবস্থান করছেন।
এবারের বানের পানিতে নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নৌকার মালিক ইসমাইল হোসেন। তিনি জানান, তার একটি আখের ক্ষেত পানির নিচে। এ ক্ষেতের আখ চিনি কলে দেওয়া হয়। এছাড়া কৃষিকাজের জমিগুলোও কয়েক ফুট পানির নিচে।
ভাংগার মোড়ের সিঅ্যান্ডবি সড়কের উপরে বন্যার পানি উঠেছে। তবে মাঝে মাঝে দু’এক জায়গায় একটুখানি জায়গা ভেসে রয়েছে। সেখানে বসে গাঁয়ের গৃহবধূ বানের পানির পানে তাকিয়ে আছেন। আগন্তুক দেখে ভাবছেন হয়তো সরকারি কোনো সাহায্য এসেছে।
ইসমাইল হোসেন জানান, বানের পানিতে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এরইমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতিবছর এ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হলেও এবার ‘রূপটা’ অন্যরকম বলে মন্তব্য তার।
এদিকে বানের পানিতে ঘরবাড়ির সঙ্গে তলিয়ে গেছে বিশুদ্ধ পানির টিউবয়েল। কোনো কোনোটি নষ্ট হয়ে বন্যাকবলিত মানুষদের বিশুদ্ধ পানি সংকটে ফেলেছে। ভাংঙার মোড় এলাকায় স্কুলের ভেতরে একবুক পানি হওয়ায় বন্ধ রয়েছে পাঠদান। খাবার সংকটে না খেয়ে কোনো রকমে দিন পার করছেন অনেকে।
হানিফ উদ্দিন চিড়া, গুড় নিয়ে যাচ্ছেন। সাংবাদিক শুনে নিজেই চিৎকার দিয়ে বলছেন, বাড়িতে পানি উঠেছে এক সপ্তাহ। খাওয়ার কিছু নেই। সম্বল হিসেবে এগুলো নিয়ে যাচ্ছেন।
তবে বর্ণনা যাই দেওয়া হউক বাস্তব চিত্রটা আরো ভয়ঙ্কর। পানিবন্দি জীবনে অভ্যস্ত এসব মানুষের মুখের দিকে তাকালে ভয়াবহতার চিত্রটা আরো পরিষ্কার ফুটে ওঠে।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৭
জেডএস