ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

কী ঘটেছিল সেই দিন?

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২০, ২০১৭
কী ঘটেছিল সেই দিন? ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা (ফাইল ফটো)

ঢাকা: শোকাবহ ২১ আগস্ট। দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। ২০০৪ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় মারা যান মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভানেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতা-কর্মী।

লাখো শহীদের আত্মত্যাগে স্বাধীন বাংলাদেশ নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দেশ গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথে এগিয়ে যাওয়ার পথে বার বারই আঘাত এসেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ওপর প্রথম আঘাত আসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।

এই দিন স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে অকালে জীবন দিতে হয়েছে স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে বন্দি অবস্থায় হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে।

এরপরও ঘাতকচক্র থেমে থাকেনি। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধু তনয়া আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জঙ্গিবিরোধী জনসভায় ইতিহাসের বর্বরতম গ্রেনেড হামলা চালায়। ভাগ্যের জোরে সেই দিন শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রাণ হারান দলের ২২ জন নেতাকর্মী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে ওই দিনের বর্ণনায় বলেন, দেশের ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি কলঙ্কময় দিন। ২০০৪ সালের এ দিনে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশে বর্বরতম গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। চারিদিকে যখন গ্রেনেড বিস্ফোরিত হচ্ছে, তখন আমাদের নিবেদিত প্রাণ নেতা-কর্মীরা মানববর্ম তৈরি করে আমাকে রক্ষা করেন। আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমত ও জনগণের দোয়ায় আমি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই। তবে সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড হামলায় বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২২ নেতা-কর্মী নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী, সাংবাদিক ও নিরাপত্তাকর্মী। অনেকে আজও পঙ্গুত্বের অভিশাপ বহন করছেন। অনেকে দেহে স্পিন্টার নিয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। এ হামলার মূল লক্ষ্য ছিলো স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, শান্তি ও উন্নয়নের ধারাকে স্তব্ধ করে দেওয়া, বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করা, ষড়যন্ত্র, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করা।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ওই দিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে বিকেলে ৫টার একটু আগে বুলেটপ্রুফ মার্সিডিজ বেঞ্জে করে পৌঁছান শেখ হাসিনা। একটি ট্রাকে অস্থায়ী মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শেষে শেখ হাসিনা বক্তব্য দেন। সমাবেশে ছিলো হাজারো মানুষের স্রোত। সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি-৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে যাওয়ার কথা।

বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে বক্তব্য শেষ করে শেখ হাসিনা তার হাতে থাকা একটি কাগজ ভাঁজ করতে করতে এগুতে থাকেন। ট্রাক থেকে নামার সিঁড়ির কাছে গেলেই শুরু হয় নারকীয় গ্রেনেড হামলা। বিকট শব্দে একের পর এক বিস্ফোরিত হতে থাকে গ্রেনেড। মুহূর্তেই মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। ট্রাকে অবস্থানরত নেতারা ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মানবঢাল রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করেন।

গ্রেনেডের টার্গেট মিস হওয়ায় শেখ হাসিনার গাড়িতেও গুলি ছুড়েছিল ঘাতকরা। তবে ঘাতকদের গুলি শেখ হাসিনাকে বহনকারী বুলেটপ্রুফ গাড়ির কাঁচ ভেদ করতে পারেনি। শেখ হাসিনাকে রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ।

শেখ হাসিনা রক্ষা পেলেও ভয়ঙ্কর গ্রেনেড হামলায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় অসংখ্য মানুষের দেহ। কারও হাত নেই, কারও নেই পা। আহত মানুষগুলো ঢাকা মেডিকেল, তৎকালীন পিজি হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে বাধা পেয়ে শিকদার মেডিকেল, মিটফোর্ড হাসপাতালসহ বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ভয়াবহ হামলা প্রতিহতে সেই সময়ে কোনোই ব্যবস্থা নেয়নি তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোটের অাইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। চারদিক থেকে থেকে টিয়ারগ্যাস ছুড়ে অন্ধকার পরিবেশ তৈরি করে ঘাতকদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়। ঘটনাস্থলে থাকা সব আলামত পানি দিয়ে ধ্বংস করা হয়।

হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ১৬ জন। গুরুতর আহত আইভী রহমান ২৪ আগস্ট মারা যান। আহত হয়ে দেড় বছরের মাথায় মারা যান আওয়ামী লীগের নেতা ও ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ।

হামলায় নিহত অন্যরা হলেন- শেখ হাসিনার দেহরক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মোশতাক আহমেদ সেন্টু, হাসিনা মমতাজ রিনা, রিজিয়া বেগম, সবার প্রিয় আদা চাচা ওরফে রফিকুল ইসলাম, রতন শিকদার, মোহাম্মদ হানিফ ওরফে মুক্তিযোদ্ধা হানিফ, লিটন মুনশি, আবদুল কুদ্দুছ পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন, আব্বাছ উদ্দিন শিকদার, আতিক সরকার, মামুন মৃধা, নাসির উদ্দিন সরদার, আবুল কাসেম, আবুল কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, জাহেদ আলী, মোতালেব ও সুফিয়া বেগম।

আহত হয়েছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক, ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, সাহারা খাতুন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, কাজী জাফর উল্লাহ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এস এম কামাল হোসেন, পংকজ দেবনাথ, সাঈদ খোকন।

আহত আরও হলন, নজরুল ইসলাম বাবু, নাসিমা ফেরদৌসী, শাহিদা তারেক দিপ্তী, উম্মে রাজিয়া কাজল, আসমা জেরিন ঝুমু, রাশেদা আক্তার রুমা, আবুল হোসেন মোল্লা, মামুন মল্লিক, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, হামিদা খানম মনিসহ পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
এমআইএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।