রোববার (১ অক্টোবর) সকাল থেকেই গণভোট আয়োজন এলাকায় পুলিশ ও স্বাধীনতাকামীদের সংঘর্ষ হয়। স্থানীয় সময় রাত ৮টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পর কাতালোনিয়া সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সারাদিনে সংঘর্ষে তাদের ৭৬১ জন লোক আহত হয়েছে।
কাতালান সরকারের বক্তব্যের পরই কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, সংঘর্ষে ১২ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে তিনজনকে। এছাড়া ৯২টি ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সাংবিধানিক আদালতের পক্ষ থেকে এই আয়োজনকে ‘অবৈধ গণভোট’ বলার পর থেকেই তা রুখতে অজস্র পুলিশ রাস্তায় নামায় স্পেন সরকার। ভোটের দিন কাতালোনিয়ার রাজধানী বার্সেলোনায় রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করা হয় নির্বিচারে।
ভোটগ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয় বলেন, কাতালান জনগণকে এই অবৈধ ভোটে অংশ নিতে বোকা বানানো হয়েছে। আর এই অবৈধ ভোট রুখতে পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে।
অপর দিকে স্বাধীনতাকামী বার্সেলোনার মেয়র আদা কোলাউ পুলিশের তৎপরতার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এই অঞ্চলের জনগণ অসহায় হয়ে পড়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার শুরু থেকেই গণভোট আয়োজন ও ফলাফলকে মানা হবে না বলে জানিয়ে এলেও কাতালান সরকার বলছে, তারা ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ফল জানিয়ে দেবে।
৭৫ লাখ কাতালানের মধ্যে এবার ভোটার ছিল ৫৩ লাখ। একটি আঞ্চলিক দৈনিকের জরিপ মতে, এই ভোটারদের মধ্যে ৮৫ শতাংশই স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তার অর্থ দাঁড়ায়, ভোটের ফলাফলও স্বাধীনতার পক্ষে আসছে।
কিন্তু ফল স্পেন সরকার না মানলে এর পরবর্তী প্রক্রিয়া কী হবে সে বিষয়ে কিছু স্পষ্ট জানা যাচ্ছে না। যদিও ফল অনুযায়ী স্প্যানিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা বলে আসছিলেন কাতালান নেতারা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গণভোটে বাধা ও জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার কাতালোনিয়াজুড়ে সর্বাত্মক ধর্মঘট ডেকেছে আঞ্চলিক শ্রমিক সংগঠন ও স্বাধীনতাকামী গ্রুপগুলো। কিন্তু পুলিশ এই কর্মসূচি পালন করতে দেবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
রোববার কাতালোনিয়া জুড়ে এমন উত্তপ্ততার মধ্যে বার্সেলোনার ক্যাম্প ন্যুতে স্বাগতিক দল ও লাস পালমাসের মধ্যকার ম্যাচটি হওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। পরে লা লিগা কমিটি আলোচনায় বসে খেলাটি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। শেষ পর্যন্ত মাঠে গড়ানো ওই খেলায় ৩-০ গোলে জয় পায় বার্সা।
মাঠের বাইরে গণভোট ইস্যুতে সরব ফুটবলার জেরার্ড পিকে খেলার পরও এ নিয়ে কথা বলেন। তিনি ক্ষোভ ও আবেগঝরা কণ্ঠে গণভোট বন্ধের চেষ্টার নিন্দা জানান এবং এজন্য তাকে কেউ স্পেন জাতীয় দলে ‘সমস্যা’ মনে করলে ২০১৮ বিশ্বকাপের আগেই দল থেকে সরে দাঁড়াতে পিছপা হবেন না বলে উল্লেখ করেন।
স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী প্রায় ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারের কাতালোনিয়ায় রয়েছে ৭৫ লাখ মানুষের বসবাস, যা স্পেনের মোট জনগণের ১৬ শতাংশ। স্পেন থেকে যা রফতানি হয়, তার ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ রফতানি হয় এই অঞ্চল থেকে। স্প্যানিশ জিডিপিতে কাতালোনিয়ার অবদান ১৯ শতাংশ। স্পেনে বিদেশি বিনিয়োগের ২০ দশমিক ৭ শতাংশ যায় এই অঞ্চলে।
নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির কাতালানরা সর্বোচ্চ স্বায়ত্তশাসনের অধিকার ভোগ করলেও সাংবিধানিকভাবে পৃথক রাষ্ট্র হতে চায়। এখানকার আঞ্চলিক সরকার গত প্রায় পাঁচ বছর ধরেই আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চাপ হজম করছে জনগণের। ২০১৫ সালের আঞ্চলিক নির্বাচনে স্বাধীনতাপন্থি দল বিজয়ী হলে এই চাপ আরও স্পষ্ট হয়।
তবে স্বাধীনতার দাবিতে কাতালানরা সরব হওয়ার পর থেকেই বিরোধিতা করে আসছে স্প্যানিশরা। এই বিরোধিতার মধ্যেই ২০১৪ সালে কাতালানরা পরীক্ষামূলক গণভোট করলে তার ফলাফলকে উড়িয়ে দেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয়। তিনি সেসময় বৈধ উপায়ে গণভোট আয়োজনের আবদারও না মানার কথা স্পষ্ট জানিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত গণভোট হলেও ফলের প্রতিক্রিয়া কী হবে, তা নিয়েই চিন্তা বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের।
বাংলাদেশ সময়: ০২৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৭
এইচএ/
কাতালোনিয়ায় গণভোট নিয়ে সংঘর্ষে আহত তিন শতাধিক
কাতালানদের স্বাধীনতার গণভোট রোববার, বার্সেলোনায় র্যালি