মিয়ানমার থেকে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, মূল ভিক্টিম পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা। তাদেরকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ।
‘কিন্তু সমস্যা যেহেতু মিয়ানমার সরকার ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে, তাই আলোচনায় তাদেরও প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিৎ। একইসঙ্গে ঘটনার শুরু থেকে যুগের পর যুগ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সরব জাতিসংঘেরও প্রতিনিধিত্ব থাকা প্রয়োজন’।
রাখাইন রাজ্যের মংডুর বলিবাজারের ডিবলতলি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হাসান বসরি বাংলানিউজকে বলেন, ‘মানবিক কারণে লাখ লাখ রোহিঙ্গার জন্য সীমান্ত খুলে দিয়ে ঘটনাক্রমে বাদী হয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু মূল ভিক্টিম তো মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে যে আলোচনা চলছে, তাতে তাই মূল ভিক্টিমেরও প্রতিনিধিত্বের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক। থাকা দরকার জাতিসংঘেরও। তা না হলে রোহিঙ্গাদের ওপর অন্যায় করা হবে অথবা সুযোগ থাকবে’।
তিনি বলেন, ‘এতো বড় ধ্বংসযজ্ঞ, নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরও মিয়ানমার সরকার এটাকে অস্বীকার করছে। তারা বলছেন, মুসলিমরা কেন বাংলাদেশে পালিয়ে যাচ্ছেন, তা জানেন না! এতেই বোঝা যায়, তারা ঢাকায় এসে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে নতুন নাটক সাজানোর চেষ্টা করছেন। আসলে ফেরতই নিতে চান না’।
‘এ কারণেই ভস্মীভূত রোহিঙ্গাশূন্য গ্রামগুলোতে তারা ‘মুসলমানমুক্ত গ্রাম’ সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন। তাই দু’দেশের সরকারের আলোচনায় পক্ষ হতে চান রোহিঙ্গারা। আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে আলোচনায় জাতিসংঘের প্রতিনিধিত্ব থাকাও জরুরি’।
বলিবাজারের ডিবলতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে চতুর্পাক্ষিক চুক্তি হতে হবে। যেখানে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, রোহিঙ্গা প্রতিনিধি ও জাতিসংঘ স্বাক্ষর করবে। কেবলমাত্র দু’দেশের চুক্তি হলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার সরকারের হাতে আর একদফা প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি ও স্বভূমিতে ফেরা অনিশ্চিত থেকে যাবে’।
উখিয়ার কুতুপালং পুরনো ক্যাম্পে আশ্রিত রাথেডংয়ের রোহিঙ্গা রাজনীতিবিদ সাবেক সেনা সরকারের হাতে বারবার কারা নির্যাতিত এনএলডি নেতা জাফর আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘একদিকে ঢাকায় এসে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন মিয়ানমারের ক্যাবিনেটমন্ত্রী কিও তিন্ত সোয়ে। অন্যদিকে সেনাবাহিনী ও রাখাইন মগরা রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের দেশ ছাড়তে মাইকিং করছেন। মংডু ও এর উপকণ্ঠের গ্রামগুলোর রোহিঙ্গারাও এখন বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছেন। একদিকে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসতে বাধ্য করছে, অন্যদিকে মিয়ানমার সরকার তাদের ফেরত নেওয়ার নাটক করছে। এটি হাস্যকর’।
তিনি বলেন, ‘কেবলমাত্র মিয়ানমারের প্রস্তাবে রাজি হলে বা থেমে গেলে চলবে না। এটি তাদের সময়ক্ষেপণের চেষ্টা। দেশে ফেরত নেওয়াটাই সম্পূর্ণ সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধানে অবশ্যই বাংলাদেশ ও জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে হবে’।
‘এর মূল যেহেতু মিয়ানমারে, তাই স্থায়ী সমাধানে অবশ্যই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষকে আরো ১৩৫টি জনজাতির মতো নৃ-গোষ্ঠীর স্বীকৃতি দিতে হবে দেশটিকে। অন্য সবার মতো সব সুযোগ-সুবিধা ভোগের সমান অধিকারও দিতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা চিকিৎসক, আইনজীবী, প্রকৌশলী ও শিক্ষাবিদদের খুঁজে নিতে হবে। বিদেশে বাস করে আরাম-আয়েশে গা ভাসানো রোহিঙ্গাদের নিয়ে ব্যবসাকারী কথিত রোহিঙ্গাপ্রেমীদেরকে বাদ দিতে হবে’।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৭
আরএম/এএসআর