বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) অপূর্বা বর্ধন (১৩) স্বর্ণাকে নিজ রুমে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। এ ঘটনার পর তার পরিবার থেকে অভিযোগ উঠে, প্রাণঘাতী ব্লু হোয়েল গেম খেলে আত্মহত্যা করেছে সে।
স্বর্ণার মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না তার মা, বাবা ও স্বজনরা। তারা বলছেন, আগে যদি এই মরণ গেম সম্পর্কে জানতাম তাহলে মাকে যেতে দিতাম না।
সোমবার (৯ অক্টোবর)রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে স্বর্ণার বাসায় গিয়ে তার মা, বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়।
স্বর্ণার বাবা অ্যাডভোকেট সুব্রত বর্ধন বাংলানিউজকে বলেন, আত্মহত্যার ৭-৮ দিন আগে থেকে স্বর্ণা খুব বিষণ্ণ ছিল। প্রতিদিন স্কুল থেকে এসে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে মোবাইল ফোন নিয়ে বসে থাকতো। ভেতরে ভেতরে সে যে মৃত্যুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল তা বুঝতে পারিনি।
ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে সুব্রত বর্ধন বলেন, চট্টগ্রাম থেকে একটি কাজ সেরে বাসায় আসি। দুই তিন দিন ব্যস্ত সময় কাটিয়ে বাসায় ফেরায় খুব ক্লান্ত ছিলাম। সেই সুযোগটিকে সুকৌশলে কাজে লাগিয়েছিল স্বর্ণা। ওইরাতে আমি আর আমার স্ত্রী টিভি দেখছিলাম। তখন স্বর্ণা আমাকে এসে বলে, বাবা তুমি তো ২-৩ দিন পরিশ্রম করে এসেছো, এখনো কেন ঘুমাচ্ছ না। হাসি মুখে এমনভাবে বলছিল যে, সন্দেহ করার কোনো অবকাশ ছিল না।
তিনি বলেন, পরে সে আমাকে বলে- বাবা ডাক্তার না বলেছিল ঘুম না এলে ট্রিপটিন খেতে, নাও এখন একটি ট্যাবলেট খেয়ে শুয়ে পড়। আমি নরমালি ১০ এমজির ট্রিপটিন খাই, আর বেশি সমস্যা হলে ২৫ এমজি। ওই রাতে আমার তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু সে আমাকে সুকৌশলে ২৫ এমজির ট্রিপটিন খাইয়ে দেয়। তারপর আমি ইনস্যুলিন নিয়ে খাবার খেয়ে গভীর ঘুমে স্বর্ণার রুমে শুয়ে পড়ি।
সুব্রত আরো বলেন, রাত ১টায় স্বর্ণা ঘুম ভাঙ্গিয়ে বলে- বাবা, মা তোমাকে ডাকছে। তুমি ওই রুমে চলে যাও। আমি তাকে বলি, আমি আজ তোমার রুমে ঘুমাব। হাসিমুখে সে আমাকে বলে, বাবা তুমি ভুলে গেছো, রোববার আমার পরীক্ষা। এখন রুমে লাইট জালিয়ে পড়ব। তুমি যেন বেশি ঘুমাতে পার তাই এতক্ষণ টিভি দেখেছি। এখন তুমি মার রুমে চলে যাও। সকালে এসে দেখি, মা আমার ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে।
স্বর্ণা ব্লু হোয়েল গেম খেলতো কিনা সে সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা প্রথমে এ বিষয়ে কিছুই জানতাম না। যখন স্বর্ণার মরদেহ পুলিশ সুরতহাল করছিল, তখন ভিড়ের মধ্যে একজন বলে ওঠে, ওর আত্মহত্যা ব্লু হোয়েল গেমের লক্ষণের সঙ্গে মিলে যায়। আমি এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার পর দেখি, এর সঙ্গে স্বর্ণার আচরণগত অনেক মিল।
লক্ষণগুলোর বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সে মাঝে মধ্যে হঠাৎ আমাদের ছাদে নিয়ে যেত। পরে জানতে পারি, এটিও ওই গেমের একটি লক্ষণ। তাছাড়া সে বিশেষ এক ধরনের মিউজিক শুনত, যা কাউকে শুনতে দেয়নি। পরে জানা যায়, গেম থেকে বিশেষ কিছু মিউজিক দেওয়া হয়, যা শুনে মানুষ আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়। সে হঠাৎ করে বন্ধুদের সঙ্গে বিতণ্ডায় জড়াতো, সেটাও একটি লক্ষণ। বিভিন্ন ভূতের মুভি দেখতো। তার পায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। কিন্তু সেটি কোনো ট্যাটু, নাকি অন্য কিছু, বলতে পারব না।
ব্লু হোয়েলে আত্মঘাতী স্কুলছাত্রী স্বর্ণা!
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৭
এমএসি/জেডএম