ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

সেই দুই শিশুর পড়ালেখার দায়িত্ব নিলেন প্রতিমন্ত্রী 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
সেই দুই শিশুর পড়ালেখার দায়িত্ব নিলেন প্রতিমন্ত্রী  ট্রেন দুর্ঘটনা রুখে দেওয়া দুই শিশু

রাজশাহী: রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী এলাকায় ট্রেন দুর্ঘটনা রুখে দেওয়া দুই শিশু সিহাবুর রহমান (৬) ও টিটোন আলীর (৭) সারা জীবনের পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। 

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রতিমন্ত্রী তার ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস লিখে শিশু দুটির পড়ালেখার দায়িত্ব নেন।  

এছাড়া প্রতিমন্ত্রী বাংলানিউজকে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় রেললাইনের পাশেই শিশু দুটি বাড়ি।

আমি তাদের সারা জীবনের পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিকে তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে একথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।   

তিনি বলেন, শিশু দুটি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে কাজ করেছে সারা জীবনের জন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।  

সেমাবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ট্রেন আসতে দেখে গলায় থাকা লাল মাফলার দেখিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনা রুখে দেয় দুই শিশু। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী রেলওয়ে স্টেশনের ৪শ’ মিটার দূরে ঝিনা রেলগেটে এই ঘটনা ঘটে।  

রেলওয়ে লাইন ভাঙা দেখে লাল মাফলার দেখিয়ে তেলবাহী ট্রেনটি থামিয়ে দেয় দুই শিশু। শিশু দুটির জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায় ট্রেনটি।  

সাহসী এই দুই শিশু হলো- উপজেলার ঝিনা গ্রামের সুমন আলীর ছেলে সিহাবুর রহমান (৬) ও শহীদুল ইসলামের ছেলে টিটোন আলী (৭)। ঘটনার পর পাবনার ইশ্বরদী থেকে মিস্ত্রী নিয়ে রেল লাইন মেরামত করা হয়। দুই ঘণ্টা পর বাঘা-রাজশাহী রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। তেলবাহী ট্রেনটি খুলনা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিলো।
শিশু দুটির পড়লেখার দায়িত্ব নিলেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম 
বাঘার আড়ানী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার নয়ন আহমেদ জানান, ওই দুই ছোট্ট শিশুর কারণে তেলবাহী ট্রেনটি আজ দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে। বিষয়টি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। পরে সব ধরনের ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। লাইন মেরামতের দুই ঘণ্টা পর আবারও ট্রেন চলাচল শুরু করে।

তেলবাহী ওই ট্রেনের চালক কেএম মহিউদ্দিন জানান, দুই শিশু লাল রঙের মাফলার দিয়ে ট্রেন থামানোর সংকেত দিচ্ছিলো। লাল মাফলার দেখে তিনি প্রথমে গুরুত্ব দেননি। ট্রেন থামাবেন বলেই ভেবেছিলেন। পরে কাছে চলে যাওয়ার পরও শিশু দুইটি রেললাইন থেকে না নামায় তিনি ট্রেনটি থামিয়ে দেন। এ সময় তিনি নিচে নেমে দেখেন রেললাইন ভাঙা রয়েছে। এতেই দুর্ঘটনার কবল থেকে ট্রেনটি রক্ষা পায়। এ দুই শিশুর সাহসিকতা ও দূরদর্শিতা দেখে তিনি অবাক হয়েছেন বলেও জানান।

তেলবাহী ট্রেনের পরিচালক আরশেদ আলী জানান, হঠাৎ করে ট্রেন থামিয়ে দেওয়ায় প্রথম তিনি চালকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন। পরে দেখেন রেল লাইন ভাঙা। এ সময় বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষণিক অবহিত করেন। কর্তৃপক্ষ ঈশ্বরদী থেকে মিস্ত্রী এনে রেললাইন মেরামত করেন। পরে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এদিকে শিশু দুটি সিহাবুর ও টিটন জানায়, সকালে তারা ক্ষেত থেকে রেললাইন ধরে বাড়ি যাচ্ছিলো। কিন্তু যাওয়ার সময় দেখতে পায় রেল লাইন ভাঙা। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখে সামনের দিক থেকে একটি ট্রেন চলে আসছে। তারা জানতো লাল কাপড় দেখালে ট্রেন থেমে যায়। কিন্তু লাল কাপড় না থাকলেও একজনের গলায় লাল মাফলার ছিল।

পরে দেরি না করে তারা দুইজনে লম্বা করে সেই লাল মাফলার চলন্ত ট্রেনের সামনে মেলে ধরে। এতে ট্রেনটি তাদের কাছে এসে থেমে যায় এবং দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়।

দুই শিশু আরও জানায়, তারা স্থানীয় ঝিনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। এর মধ্যে সিহাবুর হোসেন প্রথম শ্রেণি ও টিটোন দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। তারা দরিদ্র পরিবারের সন্তান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
এসএস/বিএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।