বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিমানবন্দরের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছেন হেফাজত ও বেফাকের নেতাকর্মীরা। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন মাওলানা সাদ।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বারিধারার একটি মাদরাসা শিক্ষার্থী রায়হান বাংলানিউজকে বলেন, মাওলানা সাদ কোরান-সুন্নাহ বিরোধী অনেক বক্তব্য দিয়েছেন। এতো কিছুর পরও তিনি নিজ অবস্থান থেকে ফিরে আসেননি। তাই আমরা তাকে বিশ্ব ইজতেমায় যেতে দেবো না।
বিক্ষোভের আয়োজক নেতারা বলেন, তাদের দাবি মানা না হলে সারাদেশ অচল করে দেওয়া হবে। যেটা শাপলা চত্বরের সমাবেশকেও ছাড়িয়ে যাবে। আমরা সরকারের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছি। তারপরও যদি দাবি না মানা হয়, তাহলে আগামী ২০ তারিখ পর্যন্ত লাগাতার অবরোধ চলবে।
তবে একটি সূত্র বলেছে, বিমানবন্দরে অবস্থানরত মাওলানা সাদের সঙ্গে সরকারের প্রতিনিধিরা কথা বলেছেন। মনে করা হচ্ছে, বিমানবন্দর থেকে মাওলানা সাদ তাবলিগের কাকরাইল শুরা কার্যালয়ে যাবেন। সেখানে আলাপ-আলোচনা করে ইজতেমায় তার অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাবলিগ জামাতের এক শুরা সদস্য বাংলানিউজকে জানান, মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ঢাকা মহানগর হেফাজতের আমির আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী। বিক্ষোভ সমাবেশের আগে বায়তুস সালাম জামে মসজিদে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন মাওলানা সাদের আগমনের বিরোধী আলেম-উলামারা।
এরপরই শুরু হয় বিক্ষোভ। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিমানবন্দরের সামনের সড়কে জড়ো হতে থাকে মাওলানা কাসেমীর সংগঠন এবং বেফাকের লোকজন। নিকটস্থ দক্ষিণখান, উত্তরখান, গাওয়াইর, উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুরসহ আশপাশ থেকে বিক্ষোভকারীদের ঢল নামে বিমানবন্দর সড়ক অভিমুখে। সকালে রাজধানীর কাজলা এলাকায়ও বিক্ষোভ হয় মাওলানা সাদের বিরুদ্ধে।
বিমানবন্দরের সামনে বিক্ষোভ চলতে থাকায় সড়কের ময়মনসিংহমুখী উত্তরা-জসীমউদ্দিন মোড় পর্যন্ত এবং রাজধানীমুখী খিলক্ষেত, শেওড়া ছাড়িয়ে বনানী পর্যন্ত তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।
তাবলিগ জামাতের অন্যতম শীর্ষ মুরুব্বি, দিল্লি নিজামুদ্দিনের জিম্মাদার মাওলানা সাদের কিছু বক্তব্য ও একক নেতৃত্বের প্রশ্নে বেশ কয়েক বছর যাবৎ আলেম-উলামা ও তাবলিগের মুরুব্বিদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এর প্রেক্ষিতে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয়, আর নিজামুদ্দিন ছেড়ে চলে যান মাওলানা ইবরাহিম দেওলাসহ বেশ কয়েকজন মুরুব্বি। বিশ্বব্যাপী তাবলিগের বিভিন্ন মারকাজগুলোও দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে।
এই দ্বিধা-বিভক্তির মধ্যে সম্প্রতি কানাডা, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া তাবলিগের শুরা থেকে বাংলাদেশ শুরা ও সরকারকে চিঠি দিয়ে মাওলানা সাদকেই ইজতেমার নেতৃত্বে রাখার দাবি জানায়। কিন্তু বিরোধীরা কোনোভাবেই মাওলানা সাদকে মেনে না নেওয়ার কথা জানিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
এমএসি/এইচএ/
** তাবলিগের বিক্ষোভে বিমানবন্দর সড়কে তীব্র যানজট
** মাওলানা সাদের আগমন ঠেকাতে বিমানবন্দর চত্বরে বিক্ষোভ
** বুধবারই ইজতেমায় আসছেন মাওলানা সাদ
** নেতৃত্বে জটিলতা :: ইজতেমা মালয়েশিয়ায় সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব!