মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়ার কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে পেইন্টিং ও বিশেষজ্ঞদের যাচাই-বাছাই শেষে শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে স্প্যানটি নিয়ে রওয়ানা হবে বিশেষ ক্রেন।
তবে ঘন কুয়াশার কারণে স্প্যানটি জাজিরা প্রান্তের ৩৮ ও ৩৯ নম্বর খুঁটির কাছে নিতে ঝামেলা পোহাতে হতে পারে প্রকৌশলীদের।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রথম স্প্যান বসানোর পর প্রতি মাসে একটি করে স্প্যান ওঠানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছিলেন পদ্মাসেতুর প্রকৌশলীরা।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতুতে ৪২টি খুঁটির ওপর বসবে ৪১টি স্প্যান। পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। সেতুর মোট পিলারের সংখ্যা ৪২টি।
পদ্মাসেতুর প্রকৌশলী সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, সবকিছু ঠিক থাকলে শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে ৩ হাজার ৬শ’ টন ধারণ ক্ষমতার Tian Yi ক্রেনে করে ধূসর রঙে রাঙানো স্প্যানটি নিয়ে যাওয়া হবে। নিজস্ব চ্যানেল ও শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌরুট ব্যবহার করে জাজিরা প্রান্তের ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলার এলাকায় নিয়ে রাখা হবে স্প্যানটি।
প্রকৌশলীরা বাংলানিউজকে আরও জানান, অনুকূল আবহাওয়া থাকলে ২১ জানুয়ারি বিকেলে স্প্যান বসবে। কোনো কারণে যদি ওই দিন স্প্যানটি না বসানো যায়, তাহলে ২২ জানুয়ারি সকালে বসানোর বিষয়ে তারা আশাবাদী।
পিলারের বেয়ারিংয়ের ওপর বসানো হবে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের স্প্যানটি।
এদিকে শিমুলিয়া-কাঠালবাড়ি নৌরুট দিয়ে স্প্যান নেওয়ার কারণে ওই রুটে ফেরিসহ সকল নৌযান বন্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাট উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. খালেদ নেওয়াজ।
বাংলানিউজকে তিনি জানান, পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় স্প্যান যেহেতু এই নৌরুটে নেওয়া হবে, তাই পদ্মা সেতুর প্রকৌশলীরা শুক্রবার সকালে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছেন। তবে নির্দিষ্ট কোনো সময় উল্লেখ করা হয়নি।
এরই মধ্যে ৩৮ ও ৩৯ নম্বর পিলারের সব কাজ শেষ হয়েছে। ৩৯ নম্বর পিলারে কংক্রিট ঢালাইয়ের আগে ৩ ধাপে পাইল ক্যাপ কংক্রিটিং করা হয়েছে। শেষ ধাপের কংক্রিটিংয়ের আগে পিয়ার কলামের রড প্রবেশ করানো হয়েছে। এরপর বাইন্ডার রড দিয়ে বেঁধে উপযোগী করে তোলা হয়।
বাইন্ডার রড সেটাপ শেষে সাটার সেটাপ করা হয়। এর আগে সাটারের ভেতরে রিলিজিং এজেন্ট লাগানো হয়। আনুষঙ্গিক কিছু ফরম ভাইব্রেটর মেশিন সেট করা হয় তার সঙ্গে। এরপর চূড়ান্ত পর্যায়ে পিন্থ ঢালাই করা হয়।
এ ছাড়া বেয়ারিং বসানো হয়েছে পিলার দু’টিতে। যা সেতুর ভূকম্পনরোধ এবং সেতুর ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করবে। ৩৮ নম্বর পিলারটি আগে থেকেই প্রস্তুত আছে। ইতিমধ্যেই দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞ প্যানেল নিখুঁতভাবে পিলার দু’টি স্প্যান বসানোর উপযোগী কিনা যাচাই-বাছাই করেছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২৭ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জে পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি প্রসঙ্গে বলেন, মূল সেতুর কাজ অনেক এগিয়ে গেছে। পদ্মা নদী আমাজানের মতো একটি নদী, একেবারে অনিশ্চিত একটি নদী।
নির্দিষ্ট তারিখ দিয়েও আমরা সেই নির্ধারিত সময় রাখতে পারি না। দ্বিতীয় স্প্যান বসাতে আমাদের আরেকটু সময় লাগবে, তা মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত গড়াতে পারে। পদ্মার নিচের অনিশ্চিত পরিস্থিতি, গভীরতা ইত্যাদি মিলিয়ে টেকনিক্যাল কিছু সমস্যা আছে। আমাদের টার্গেট, আমরা যথাসময়ে কাজ শেষ করবো।
এদিকে বুধবার (১৭ জানুয়ারি) পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. শফিকুল ইসলামের চুক্তির মেয়াদ আরও দুই বছর বৃদ্ধি করেছে সরকার।
২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর চুক্তিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান শফিকুল ইসলাম। ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর তার চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৮
এমএইউ/