ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শান্তিনিকেতনে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন শুক্রবার

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৯ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৮
শান্তিনিকেতনে ‘বাংলাদেশ ভবন’ উদ্বোধন শুক্রবার শান্তিনিকেতনে উদ্বোধন হচ্ছে বাংলাদেশ ভবন 

ঢাকা: আধুনিক সব সুবিধা নিয়ে দুই দেশের কৃষ্টি ও সংষ্কৃতি বিকাশ এবং বন্ধুত্ব সুদৃঢ় করতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত ‘বাংলাদেশ ভবন’-এর উদ্বোধন হচ্ছে শুক্রবার (২৫ মে)।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভবনটি স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৫০মিনিটে উদ্বোধন করবেন বলে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমদু আলী, সংষ্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর উপস্থিত থাকবেন।

অন্যান্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল শ্রীকেশরীনাথ ত্রিপাঠী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দোপাধ্যায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।

শিক্ষামন্ত্রী বৃহস্পতিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত শান্তিনিকেতনে যাওয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী ‘বাংলাদেশ ভবন’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি তদারক করতে অগ্রগামী দলের সদস্য হিসেবে সেখানে গেলেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মো. হানজালা বুধবার (২৩ মে) একই উদ্দেশ্যে শান্তিনিকেতনে গেছেন।  

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুষ্ঠুভাবে ভবন নির্মাণের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন। ভবন উদ্বোধনের কাজে তিনি বর্তমানে তিনি কলকাতায় অবস্থান করছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় শান্তিনিকেতনে নির্মিত হল ‘বাংলাদেশ ভবন’। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ভবনটি নির্মাণ করেছে ভারতীয় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (এনবিসিসি)’।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধ-শত জন্মবার্ষিকীর স্মারক হিসেবে শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত ‘ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন কো-অপারেশন ফর ডেভেলপমেন্ট’-এ তার এই আগ্রহ লিখিতরূপে স্থান পায়। সেই ধারাবাহিকতায় ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময়ের পর প্রাসঙ্গিক ধারণাপত্র তৈরি, স্থান নির্বাচন, কারিগরি নকশা প্রণয়ন, ব্যয় প্রাক্কলন তেরি ইত্যাদি সম্পন্ন করে ২০১৬ সালের শেষভাগে বাংলাদেশ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়।  

বাংলাদেশের পক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ভবন নির্মাণের জন্য ৪৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা অর্থায়ন করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত প্রতিনিধিদল, যার প্রধান ছিলেন সোহরাব হোসাইন। তিনি বেশ কয়েকবার সরেজমিন নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন
‘বাংলাদেশ ভবন’ সম্পর্কিত তথ্য
বাংলাদেশ ভবনের জন্য জমির পরিমাণ ৮ বিঘা সমপরিমাণ বা প্রায় ২.৭৫ একর।

ভবনে ৪৫৩ আসনবিশিষ্ট একটি আধুনিক অডিটোরিয়াম, দু’টি সেমিনার হল, গ্রন্থাগার, জাদুঘর, ক্যাফেটোরিয়া ও আর্কাইভ স্টুডিও রয়েছে। অডিটোরিয়ামে আলো ও শব্দের যথাযথ প্রক্ষেপণ সংস্থান করা হয়েছে। অডিটোরিয়ামের ছাদ বাংলাদেশের নৌকার ছৈ-এর আদলে তৈরি।

ভবনের নীচতলায় অবস্থিত প্রতিটি ১৬০ আসন বিশিষ্ট ২টি সেমিনার হল। প্রয়োজনে সেমিনার হল দু’টির অন্তর্বর্তী স্লাইডিং ফোল্ডিং পার্টিশন সরিয়ে একটি মাল্টিপারপাস হল হিসেবে পুরো হল ব্যবহার সম্ভব।  

ভবনের নীচতলায় দক্ষিণ পার্শ্বে প্রায় ৩০০০ বর্গফুট বিশিষ্ট একটি জাদুঘর আছে যেখানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কিত বিষয়াদি প্রদর্শনীর জন্য স্থান পাবে।

নীচতলায় প্রধান প্রবেশের পরে ভবনের ভেতরে দৃশ্যমান একটি উঠান আছে। উঠানে প্রাকৃতিক অলো আসার ব্যবস্থা রয়েছে এবং বর্ষাকালে ওই উঠানে বসে বর্ষাও শব্দ ও আমেজ উপভোগ সম্ভব। বাংলাদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রচারের জন্য এই উঠানে কোনো মেলার আয়োজন হতে পারে বা একটি মিলনমেলার স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

প্রধান প্রবেশ পথের উপরের পোর্চটি বাংলাদেশের চৌচালা ছাদের অনুরূপ করে লাল টালি দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়েছে।

ভবনের দোতলায় প্রায় ১৩০০ বর্গফুটের লাইব্রেরি অবস্থিত। এছাড়াও একটি স্টুডিও ও একটি ফ্যাকাল্টি কক্ষের সংস্থান দোতলাতে রয়েছে।

দোতলার বামপার্শ্বে প্রায় ১০০০ বর্গফুটের একটি ক্যাফে আছে। অনুষ্ঠানের দিনে এ ক্যাফে ব্যবহার সম্ভব হবে। ক্যাফের বাইরে খোলা ছাদে বসার ব্যবস্থা রয়েছে।  

পুরো ভবনটি প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রবেশগম্য হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনে ব্যবহৃত উপকরণসমূহে মাটি পোড়ানো ইট ব্যবহার না করে স্যান্ড সিমেন্ট দ্বারা তৈরি ইট ব্যবহার করা হয়েছে এবং চৌচালা ছাদে ইটের টালির পরিবর্তে পিভিসি লাল টালি ব্যবহার করা হয়েছে।

সোহরাব হোসাইন বলেন, বাংলাদেশ ভবন এদেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে একটি অনবদ্য ভবন হিসেবে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৫ ঘণ্টা, মে ২২, ২০১৮
এমআইএইচ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।