বুধবার (২৭ জুন) বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব তথ্য জানান। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য বেগম আখতার জাহানের পৃথক দুটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের দীর্ঘ ৬ বছরের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশ জয় সম্ভব হয়েছে। মহাকাশে আজ বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। এ গৌরব আমাদের সরকারের, এ গৌরব দেশের ১৬ কোটি মানুষের। স্যাটেলাইট টেকনোলজি ও সেবা প্রসারের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। স্পেস টেকনোলজির জ্ঞান সমৃদ্ধ মর্যাদাশীল জাতি গঠনে অনবদ্য ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১।
তিনি বলেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়ায় তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয়ের উদ্যোগে মহাশূন্যে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের পদক্ষেপ গ্রহণ করি। স্বপ্নের স্যাটেলাইট নির্মাণ ও এর সফল উৎক্ষেপণে আমি গর্বিত এবং আনন্দিত।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ২০১২ সালে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ সকল প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন করা হয়। ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এ জটিল নির্মাণ প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লেগেছে ২ বছর।
তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ মোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার আছে। এর মধ্যে ২০টি বাংলাদেশের জন্য এবং ২০টি ট্রান্সপন্ডার লিজ দেওয়া যাবে। ট্রান্সপন্ডার লিজ দিয়ে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বর্তমানে প্রদেয় বার্ষিক প্রায় ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর কাভারেজভুক্ত এলাকা হলো বাংলাদেশসহ সকল সার্কভুক্ত দেশ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, তুর্কমেনিস্তান, কাজাখস্তান এবং উজবেকিস্থান।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারের দক্ষ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ফলে রাজস্ব আহরণে ঊর্ধ্বগতি এবং ঋণ গ্রহণে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা সম্ভব হয়েছে। মূল্যস্ফীতিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। প্রবৃদ্ধির সুফল সুষমভাবে বণ্টিত হওয়ায় একদিকে যেমন মাথাপিছু আয় বেড়েছে, অন্যদিকে দারিদ্র্য ও অসমতা কমেছে উল্লেখযোগ্য মাত্রায়।
তিনি জানান, প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যাচ্ছি। দেশে অদক্ষ জনগোষ্ঠীকে আধা ও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরে নানামুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গড়ে বার্ষিক ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ২০২০ সাল নাগাদ ৮ শতাংশে উন্নীত হবে। আশা আশা করি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পাঁচ বছর মেয়াদে প্রবাসে ২০ লাখসহ ১ কোটি ২৯ লাখ অতিরিক্ত কর্মসংস্থান হবে। এ সময়ে ৯৯ লাখ শ্রমিক কর্মশক্তিতে যোগদান করবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, রফতানি কেন্দ্রিক উৎপাদনে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে উৎসাহিত করতে হবে। অপ্রচলিত পণ্য রফতানির মাধ্যমে অধিক পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ৩০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশে রফতানি আয় ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৮
এসএম/এসকে/এমজেএফ