নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রভাবশালী ওই নেতাকে তিন হাজার ১৭৪ ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তৎসময়ে যুক্তরাজ্য ফেরত আওয়ামী লীগ নেতা শফিকুর রহমান চৌধুরী।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের জন্য আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ।
দলের মনোনয়ন না পেলেও আনুগত্য থেকে পিছপা হননি শফিকুর রহমান চৌধুরী। পুনরায় দলের মনোনয়ন পেতে জনসম্পৃক্ততা বজায় রেখে চলেছেন তিনি।
কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন লাভে প্রধান বাধা যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। প্রার্থী হতে নির্বাচনী এলাকায় গড়ে তুলেছেন রাজনৈতিক বলয়। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে দেশে ঘন ঘন আসা-যাওয়া করছেন। এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে যেতে সভা-বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।
এদিকে বিএনপির হয়ে এই আসনে প্রার্থী হতে রাজনৈতিক সমর্থনের পাশাপাশি জনসমর্থন গড়ে তুলেছেন তাহসিনা রুশদীর লুনা। তার স্বামীর হারানো আসন পুনরুদ্ধারে এরই মধ্যে এলাকায় পাকাপোক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন বলেও মনে করেন দলের নেতাকর্মীরা।
বিএনপি থেকে এই আসনে গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রার্থী না থাকায় নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস পত্মীর মনোনয়ন পাওয়ার পথ মসৃণ বলা যায়। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও জাপার তিন চৌধুরীর মধ্যে লুনার মোকাবেলা করছেন কোনো চৌধুরী? তা নিয়ে এলাকায় মুখে মুখে আলোচনা চলছে। ২০দলীয় জোটের শরিক খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাসির আলী এই আসনে নির্বাচন করতে অনেকটা আগ্রহী।
এ লক্ষ্যে তিনি জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। এছাড়া এ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকায় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবীর, জাপার কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল্লাহ সিদ্দিকীও।
সিলেট-২ আসনের নির্বাচন সম্পর্কে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ খান জামাল বাংলানিউজকে বলেন, সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে এটি স্পর্শকাতর। নির্বাচনের তফসিলে ঘোষণার আগেই এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলী ‘গুম’ নামক কারাগার থেকে ফিরে আসবেন। তিনিই বিএনপির প্রার্থী হবেন! এমন প্রত্যাশা দলেরও।
নিখোঁজ ওই নেতার হয়ে মাঠে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করা ও তার হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন অর্ধাঙ্গিনী লুনা। আর কোনোক্রমে ইলিয়াস আলী ফিরে না এলে লুনা এই আসনে নির্বাচন করবেন, এমনটি চাওয়া কেন্দ্রেরও। আর তাকে বিজয়ী করতেই নেতাকর্মীরা কাজ চালিয়ে যাবেন।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজাত আলী রফিক বলেন, এই আসনটি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের। এখানে শাহ আজিজ, আশরাফ আলী, ইনাম আহমদ চৌধুরী সংসদ সদস্য ছিলেন এই আসনে। সাংগঠনিকভাবে এই নির্বাচনী এলাকা থেকে জেলা পর্যায়ের নেতৃত্ব অনস্বীকার্য। সাবেক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আনম শফিক, জেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম ইফতেখার হোসেন শামীমে এই নির্বাচনী এলাকারই বাসিন্দা। মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান গৌরবের। যে কারণে নেতাকর্মীদেরও এই আসনের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গতবার নির্বাচনে জোটের জন্য বিশেষ স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে আসনটি শরিকদের ছেড়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল থাকায় এই আসন থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এ কারণে নেতাকর্মীর চাওয়া এই আসনটি যাতে জোটের জন্য না ছেড়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে দেওয়া হয়।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিগত দিনে বিএনপির কবল থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে এই আসনটি পুণরুদ্ধারে জনতার ভোটে আমি নির্বাচিত হই। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট শরিক দলের জন্য আসনটি ছেড়ে দিলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেই। তারপরও নেতাকর্মী ও এলাকার মানুষের ভালবাসা আমাকে বিচ্যুত করতে পারেনি। আগামীতে দলের মনোনয়ন পেলে আসনটি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেবো।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, বিশ্বনাথ, ওসমানীনগর উপজেলা ও বালাগঞ্জের একাংশ (৩টি ইউনিয়ন) নিয়ে গঠিত এই আসনে ৩ লাখ ২২ হাজার ৪২৮ জন ভোটার রয়েছেন। এরমধ্যে নারী এক লাখ ৫৯ হাজার ৭২৩ এবং পুরুষ ভোটার এক লাখ ৬২ হাজার ৭০৫ জন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনের ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৩ হাজার ৫২৩ জন। এই আসনে ভোট বেড়েছে ৩৮ হাজার ৯০৫ জন।
বাংলাদেশ সময়: ০৫১৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৮
এনইউ/এএটি