প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ধূমপান থেকে শিশুসহ অধূমপায়ীদের রক্ষায় কঠোর বিধান থাকলেও এখানে আইন ভাঙা যেন নিয়মেই পরিণত হয়েছে। এতে মূল উদ্দেশ্য থেকে গেছে তিমিরেই।
মহানগর এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানেই তামাক পণ্যের বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে গ্রাহকদের তামাক পণ্য সেবনে আকৃষ্ট করতে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানি, জাপান টোবাকো (পূর্বের ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানি) এবং আবুল খায়ের টোবাকো কোম্পানি কর্তৃক বিজ্ঞাপন সম্বলিত শোকেস, ফেস্টুন, চায়ের কাপ, ছাতা ইত্যাদি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া টিভি, ফ্রিজ, ডিনার সেট, বাল্টি, মগ ইত্যাদি পুরস্কার ঘোষণা করে গত অক্টোবর থেকে প্রচারণা চালাচ্ছে আবুল খায়ের টোবাকো কোম্পানি। অথচ তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ এবং পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত বিধান ৭ এর ৫ এর ক, খ, গ উপ-ধারায় বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি প্রকাশিত কোনো বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্য কোনভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবেন না। তামাকজাত দ্রব্য কিনতে প্রলুব্ধকরণের উদ্দেশে তার কোনো নমুনা, বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে, জনসাধারণকে দেওয়া বা এর প্রস্তাব করতে পারবেন না। এছাড়া তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বা তা ব্যবহার, উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশে কোনো পুরস্কার, বৃত্তি প্রদান বা কোন অনুষ্ঠানের ব্যয়ভার (sponsor) বহন করতে পারবেন না।
আইনে সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়সহ ২৪ ধরনের স্থানকে পাবলিক প্লেস ঘোষণা দিয়ে সেসব জায়গায় ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু কাজীর গরু, কেতাবে থাকলেও গোয়ালে নেই। দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরের ১৪ মার্চ অনুষ্ঠিত এক সভায় রাজশাহী জেলা প্রশাসক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধিকতর প্রয়োগে মাসে অন্তত একবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
শুধু তাই নয়, অন্য কোনো মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালেও যদি দেখা যায় সেখানে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন হচ্ছে, তবে সেখানেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন। এরপর রাজশাহীতে কিছু মোবাইল কোর্টও পরিচালিত হয়। কিন্তু তারপর বিভিন্ন ইস্যুতে বরাবরের মত এ উদ্যোগটিও সময়ের স্তুপে চাপা পড়ে। তামাকবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসিডির এক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ওই ঘোষণার পর গত বছর রাজশাহী মোবাইল কোর্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৬টি। তবে কেবল এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোবাইল কোর্টের হিসাব এটি। এর আগে এবং পরে রাজশাহী মহানগর বা উপজেলা পর্যায়ে আর কোনো তামাকবিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়নি।
এছাড়া বছরের মধ্যভাগের ওই সময়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হলেও জরিমানার পরিমাণ ছিল কম। ১৬টি মোবাইল কোর্টে মাত্র ৯ হাজার ৬৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। জরিমানার গড় হার ৫০ থেকে ১০০ টাকা। কেবল ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর চারঘাট উপজেলা এলাকায় পরিচালিত তামাক বিরোধী একটি মোবাইল কোর্টে ৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অথচ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ক্ষেত্র বিশেষে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে। একাধিকবার আইন ভাঙলে জরিমানার হারও পর্যায়ক্রমে দ্বিগুণ হওয়ার কথা রয়েছে।
জানতে চাইলে এসিডির নির্বাহী পরিচালক সালিমা সারোয়ার বলেন, তামাকের ব্যবহার ও প্রচারণা বন্ধে মোবাইল কোর্টের কোনো বিকল্প নেই। এজন্য তারা জেলা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি নিয়ে বরাবরই দাবি জানিয়ে আসছেন। মাঝখানে মোবাইল কোর্ট শুরুও হয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে আবারও তা বন্ধ রয়েছে। এজন্য রাজশাহীতে আবারও আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা বেড়েছে। এ সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে তামাক কোম্পানিগুলো তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে আগের মতোই। তবে শিগগিরই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট শুরু করা হবে বলেও প্রত্যাশা করেন সালিমা সারোয়ার।
বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রয়োগ নিয়ে প্রশাসন যথেষ্ট আন্তরিক। তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করা পর বন্ধ থাকা মোবাইল কোর্ট আবারও পরিচালনার নির্দেশ দেন। গত বছর নিয়মিতভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালিতও হয়েছে। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে আপাতত তা বন্ধ রয়েছে। তবে শিগগিরই তামাকবিরোধী মোবাইল কোর্ট শুরু হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
বাংলাদেশ সময়: ০৬০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২২, ২০১৯
এসএস/এসএইচ