ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গাজীপুরে খালে বাঁধ দিয়ে ইটভাটার সড়ক, নির্বিকার প্রশাসন

মো. রাজীব সরকার, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৯
গাজীপুরে খালে বাঁধ দিয়ে ইটভাটার সড়ক, নির্বিকার প্রশাসন গাজীপুরে খালে বাঁধ দিয়ে ইটভাটার সড়ক, ছবি: বাংলানিউজ

গাজীপুর: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউলতিয়া এলাকায় একটি খালে বাঁধ দিয়ে ইটভাটার রাস্তা নির্মাণ করেছেন ইটভাটা মালিক। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ক্ষোভ। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এটা সম্ভব হয়েছে।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৬০/৭০ বছর আগে কৃষিকাজের সুবিধার্থে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউলতিয়া ও বিপ্রবর্তা এলাকা দিয়ে একটি খাল খনন করা হয়। কয়েক বছর আগে ওইসব এলাকায় ফসলি জমিতে গড়ে তোলা হয় ইটভাটা।

আর ইটভাটা মালিকরা অবৈধভাবে খালে বাঁধ দিয়ে নিজেদের ইটভাটার স্বার্থে কয়েকটি রাস্তা তৈরি করে। এতে খালটি দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ রয়েছে।

এ নিয়ে এলাকাবাসী মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। খালটির আকার প্রায় ছোট একটি নদীর মতো। এলাকাবাসীর অভিযোগ, স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে খালটি দখল করে নিজেদের স্বার্থে রাস্তা করে নিয়েছে ইটভাটা মালিকরা। মেসার্স এমটিবি ব্রিকস, পলান ব্রিকস, রানা ব্রিকস, মেসার্স জাপান ব্রিকস ও ঢাকা ব্রিকসের মালিকসহ আরো কয়েকটি ইটভাটার মালিক খালের ২/৩ স্থানে বাঁধ দিয়ে ইটভাটার জন্য রাস্তা তৈরি করেছে। ওই রাস্তা দিয়ে চলছে ইটভাটার কাজে ব্যবহৃত ভারী ট্রাক। বাঁধ দেওয়ার কারণে খালের অনেক স্থানে পানি শুকিয়ে গেছে। এছাড়া খালটির বিভিন্ন স্থান থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে।

সালনা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, ভাওয়াল মির্জাপুর থেকে কাউলতিয়া ও কারখানা বাজার দিয়ে একটি খাল রয়েছে। আর এসএ রেকর্ড অনুযায়ী খালটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানে। যার দাগ নম্বর ১৩৪৮ ও ১১৭৪। খালটি সরকারি। খালের কিছু কিছু জায়গায় ব্যক্তি মালিকানা রয়েছে। গাজীপুরে খালে বাঁধ দিয়ে ইটভাটার সড়ক, ছবি: বাংলানিউজস্থানীয় বাসিন্দা আজিজ মিয়া জানান, ফসলি জমিতে ইটভাটা গড়ে তোলায় কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও ওই খালটির বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দেওয়ায় খালটি মরা খালে পরিণত হচ্ছে। শুনেছি সরকার বিভিন্ন স্থানে নদী-খাল দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার ও খনন শুরু করেছে। এই খালটি দখলদারদের কাছ থেকে উদ্ধার ও অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করলে এ এলাকায় আবার কৃষি প্রাণ ফিরে পাবে।  

মেসার্স জাপান ব্রিকসের মালিক রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খালের উপর বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরি করেছি এটা সত্যি। তবে আমি একা না। আরো ইটভাটা মালিকও আছেন। খালের উপর বাঁধ দিয়ে রাস্তা করার জন্য জমির মালিককে প্রতিবছর টাকা দিতে হয়। টাকা দিয়েই আমরা রাস্তা তৈরি করেছি।

তবে কাকে টাকা দেন তার নাম তিনি বলেননি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. ফারুক আহম্মেদ জানান, প্রায় ৫০/৬০ বছর আগে কৃষিকাজের সুবিধার জন্য গাজীপুরের মির্জাপুর এলাকা থেকে কারখানা বাজার এলাকা পর্যন্ত খালটি খনন করা হয়েছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশন এলাকায় অবৈধভাবে ইটভাটা গড়ে তুলে খালটিতে বাঁধ দিয়ে ইটভাটার জন্য রাস্তা করেছেন ইটভাটা মালিকরা। এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

সালনা ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল আলীম বাংলানিউজকে বলেন, খালে বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে ভূমি অফিসের কেউ জড়িত না। খালের উপর বাঁধ দিয়ে রাস্তা তৈরির কোনো নিয়ম নেই। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০১৯
আরএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।