এই নির্বাচনকে ঘিরে জোরদার হচ্ছে জনপ্রত্যাশা। বিএনপি না এলেও প্রথম ভোট হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ হবে এই নির্বাচন।
ময়মনসিংহ: কৃষ্টি সভ্যতার পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ময়মনসিংহ। মহুয়া-মলুয়া আর চন্দ্রাবতীর প্রচ্ছদপট মৈমনসিংহ গীতিকার লোক ঐতিহ্যের পটভূমি আর জমিদারি পরগনার ঐতিহ্যের অংশ প্রাচীন এ শহর।
আবহমান কাল ধরেই রাজনীতি সচেতন, শিক্ষা ও সংস্কৃতির এই জনপদের রয়েছে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে গণঅভ্যূত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গর্বিত অধ্যায়।
দুয়ারে কড়া নাড়ছে প্রাচীন এ শহরকে নিয়ে গঠিত নতুন সিটি করপোরেশন নির্বাচন। তফসিল মোতাবেক, আগামী ৫ মে হবে এই নির্বাচনের ভোট। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এই শহরে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা ও ভোটের নানা হিসাব-নিকাশ।
এই নির্বাচনকে হার-জিত নির্ধারণ করতে পারেন নতুন ভোটাররা বিশেষ করে তরুণরা। নতুন সিটিতে প্রথম ‘নগর সেবক’ নির্বাচনকে ঘিরে তাদের প্রত্যাশাও অন্তহীন। আসন্ন ভোটকে ঘিরে এই তরুণ ভোটারেরা নতুন স্বপ্ন বুনছেন।
তাদের প্রত্যাশা, কেবল প্রতীকই নয়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সুমহান চেতনা ধারণ করেন, জনপ্রত্যাশা ধারণ করে নিবিষ্ট মনে কাজ করতে পারেন এবং সমস্যা সমাধানে সিদ্ধহস্ত এমন জনবান্ধব নেতৃত্বকেই ‘নগর সেবক’ হিসেবে দেখতে চান তারা।
পাশাপাশি তাকে ময়মনসিংহের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি এবং সৌন্দর্যের দিকে গভীর মনোযোগ দিতে হবে।
অনেকেই বলছেন, ময়মনসিংহ নগরের নতুন যোগ হওয়া ১২ টি ওয়ার্ডকে প্রথমে গ্রামীণ শহরে রূপান্তর করতে হবে। একই সঙ্গে গোটা শহরজুড়ে সুষম টেকসই উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ময়মনসিংহ জেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, আগের ২১টি ওয়ার্ডের পাশাপাশি নতুন ১২টিসহ মোট ৩৩ টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩৬। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪৫৭ এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৭৯। অবশ্য নতুন বা তরুণ ভোটারের সংখ্যা বলতে পারেননি অফিসের কর্তা ব্যক্তিদের কেউ-ই।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে উপজেলা নির্বাচনের পর ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচন থেকেও দূরে থাকছে বিএনপি। তবে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় খুব একটা মাথাব্যাথা নেই এখানকার তরুণ ভোটারদের।
তাদের ভাষ্য, মেয়র নির্বাচনের জন্য কেবল দলীয় প্রতীকই মুখ্য নয়। দল এবং গোষ্ঠীই এখানে শেষ কথা নয়। তারুণ্যের শক্তিতে বলীয়ান, বয়স ভুলে বন্ধুর মতো মিশতে পারেন এবং তরুণ-যুবাদের মনের ভাষা বুঝে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন এমন প্রার্থীই তারুণ্যের বিবেচনায় প্রথম অগ্রাধিকার পাবেন।
আবার তরুণদের কেউ কেউ মনে করেন, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ময়মনসিংহ পৌরসভাকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত করেছে। এ সরকারের আমলেই ময়মনসিংহ বিভাগ হয়েছে।
এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতেই উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে ময়মনসিংহ। ফলে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে জননেত্রীর মূল্যায়নে যিনি প্রার্থী হবেন, বিজয়ের ফসল তিনিই ঘরে তোলবেন।
শহরের নাসিরাবাদ কলেজের শিক্ষার্থী আবিদ হাসান বাংলানিউজকে বলেন, কর্মবীর, আমাদের বিশ্বাস- সৎ এবং যোগ্য ব্যক্তিই সিটি করপোরেশনের চেয়ারে আসীন হবেন। সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের পাশাপাশি উন্নয়ন কার্যক্রমকেও যিনি গতিশীল রাখতে পারবেন এমন কাউকেই ৫ বছরের জন্য মেয়র পদে চাই।
মেয়র হিসেবে কেমন প্রার্থীকে পছন্দ এমন প্রশ্নের জবাবে আনন্দমোহন কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বাংলানিউজকে বলেন, দিন-রাত এক করে যিনি নগরীর বাসিন্দাদের প্রয়োজনে খাটতে পারেন এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন মেয়রের চেয়ারে এমন প্রার্থীকেই চাই।
জেলার সংস্কৃতিকর্মীরা বলছেন, ময়মনসিংহের সাংস্কৃতিক অঙ্গণে এক সময় বন্ধ্যাত্ব ছিলো। সংস্কৃতিকর্মীদের ‘লাইফ লাইন’ অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়াম নির্মিত হয়েছে। আধুনিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই অডিটোরিয়ামের দৌলতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে এখানকার সাংস্কৃতিক অঙ্গণ।
‘‘সংস্কৃতির পাশাপাশি ময়মনসিংহের সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্যের প্রতি নজর রয়েছে এবং সংকীর্ণ দলীয় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে যিনি ‘আমজনতার’ প্রতিনিধি হয়ে নগর উন্নয়নে দক্ষতার সঙ্গে ভূমিকা রাখতে পারবেন এমন মেয়রই পছন্দ সংস্কৃতিকর্মীদের,’’ এভাবেই বলছিলেন ময়মনসিংহ সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক ইয়াজদানী কোরায়শী কাজল।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগরের সম্পাদক, সমাজকর্মী ও সাহিত্য সংগঠক আলী ইউসুফ বাংলানিউজকে বলেন, দয়ালু, কর্মঠ, এবং যিনি অনুভূতিশীল; সব সময় কাছে পাওয়া যায় এমন একজনকে মেয়র হিসেবে আমার প্রত্যাশা। তাকে অবশ্যই দুর্নীতি ও রাজনীতিমুক্ত নগর ভবন উপহার দিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৯
এমএএএম/এমএ