জেলার বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ ধর্মপুর শালবন ঘুরে দেখা যায়, বনের বিভিন্ন জায়গায় শাল গাছসহ নানা প্রজাতির গাছ নির্বিচারে কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। শুধু গাছের কিছু টুকরো রয়েছে মাটির সঙ্গে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শালবনে বসবাসরত একটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কিছু লোক এই গাছকাটার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া বনে ঘুরতে গিয়ে ওই নৃ-গোষ্ঠীরই লোকদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে পর্যটকদের। বনের গাছ এভাবে অবাধে কেটে নিলেও প্রশাসন এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। বিষয়টি বন বিভাগের লোকজনকে বারবার জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয় না।
ওই নৃ-গোষ্ঠীর বসবাসের এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তাদের ঘরের পাশে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের কাটা ডাল-পাতাসহ গুঁড়ি। কেউ কেউ আবার কাঠ কেটে রোদেও শুকাচ্ছে জ্বালাবার জন্য।
রহিম উদ্দীন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বাংলানিউজকে বলেন, কী করবো, আমরা প্রতিবাদ করতে পারি না। বনের গাছ প্রকাশ্যে কাটছে ওই সম্প্রদায়ের লোকজন। বনের ভেতরের বিভিন্ন প্রকার গাছ কেটে নিয়ে গিয়ে তারা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পর্যটকদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে নৃ-গোষ্ঠীটির লোকেরা। অনেক সময় তারা পর্যটকদের গায়ে হাতও তোলে। কারণ, তারা নাকি বনের ভেতর কারও ঢোকা পছন্দ করে না। আমরা প্রতিবাদ করতে গেলে তারা সংঘবদ্ধভাবে হামলা করে। তারা দিনদিন সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার বাড়িয়ে দিচ্ছেন।
দিনাজপুর শহর থেকে ঘুরতে যাওয়া পর্যটক আশরাফুল ইসলাম ও সাগর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শুনেছি শালবন দেখতে অনেক সুন্দর। তাই আমরা দুই বন্ধু এখানে ঘুরতে এসছি। কিন্তু এখানে নৃ-গোষ্ঠীর কিছু লোক আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। তারা জিজ্ঞাসা করে- আমরা এখানে কেনো এসেছি। এরপর তারা বিভিন্নভাবে আমাদের হেনস্তা করে।
বন বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিরল উপজেলার ধর্মপুর শালবনটি প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির ওপর। বনটিতে কী পরিমাণ গাছ রয়েছে তার কোনো হিসাব নেই বন বিভাগের কাছে।
দিনাজপুর বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা স্মৃতি সিংহ রায় বাংলানিউজকে বলেন, ধর্মপুর শালবনে গাছ কাটা হচ্ছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। যদি স্থানীয়রা লিখিত আকারে আমাদের কোনো অভিযোগ দেয়, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্মৃতি সিংহ বলেন, ওই নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন ধর্মপুর শালবনের ভেতর সাধারণ মানুষের প্রবেশ পছন্দ করে না বলে আমরা লোক মুখে শুনেছি। স্থানীয়রা আমাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছে যে, পর্যটকদের সঙ্গে তারা খারাপ আচারণও করে। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে সতর্ক করবো।
আলাপ করলে ওই নৃগোষ্ঠীটির কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা কোনো ধরনের গাছ কেটে জ্বালাই না। আমরা বাগান সব সময় পরিষ্কার রাখার জন্য পাতা কুড়িয়ে বেড়াই। বাগানে পড়ে থাকা পাতাও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করি না। স্থানীয়রা আমাদের পূর্ব-পুরুষের জমি দখল করে নিচ্ছে, এরপরও আমরা তাদের ওপর কখনোই হামলা করেনি। বরং তারাই আমাদের বিভিন্ন সময় মারধর করে।
এ বিষয়ে দিনাজপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, যদি কেউ শাল কিংবা মূল্যবান গাছ কেটে থাকে তাহলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবো। এছাড়া ধর্মপুর শালবনে দর্শনার্থীদের জন্য আমরা কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেইনি। আমরা কোনো দর্শনার্থীকে ধর্মপুর শালবনে যাওয়ার আমন্ত্রণও জানাইনি। যদি দর্শনার্থীরা শালবনে যায় তাহলে সেটা তাদের ব্যাপার, তাতেও আমরা বাধা দেবো না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৯
এনটি/এইচএ/