রোববার (২৮ এপ্রিল) আসরের নামাজের পর জাতীয় প্রেসক্লাবের টেনিস মাঠের এ জানাজায় সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন।
জানাজার আগে মাহফুজ উল্লাহর জন্য দোয়া চেয়ে বক্তব্য রাখেন তার বড় ভাই ড. মাহবুব উল্লাহ ও তার ছেলে মোস্তফা হাবিব।
ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আজকে আমার ছোট ভাইয়ের জানাজায় যারা শরিক হয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই যুগে অনেক জায়গায় ভাইয়ে ভাইয়ে অমিল থাকলেও মাহফুজ উল্লাহর সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ ছিল না। সবাই বিস্মিত হতেন যে আমাদের মধ্যে এতো মিল ছিল। কোনো বিষয় নিয়ে সে চিন্তিত হলে আমার পরামর্শ নিতো, আবার আমি কোনো বিষয়ে চিন্তিত হলে তার পরামর্শ নিতাম।
একমাত্র ছেলে মোস্তফা হাবিব বাবার জন্য দোয়া চেয়ে বলেন, এখানে আমার বোন নুসরাত হোমায়রা, দুলাভাইসহ পরিবারের অনেকে আছেন। আপনাদের কারও কাছে বাবা যদি ঋণী থাকেন অবশ্যই আমাদেরকে বলবেন। আমরা পরিশোধ করে দেবো। আর তার আচরণে কেউ যদি কোনো ব্যথা পেয়ে থাকেন দয়া করে তাকে ক্ষমা করে দেবেন।
প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমদ বলেন, মাহফুজ উল্লাহ ছিলেন তরুণ সাংবাদিক সমাজের প্রেরণা। তিনি ৫০টি বই লিখেছেন। যা ছোট বিষয় নয়। তিনি সাংবাদিকতার পাশাপাশি গবেষণা করতেন। তাকে এবং সাজ্জাদ কাদিরকে চীন সরকার গবেষণার জন্য নিয়ে গিয়েছিল।
প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, সময়ের অগ্রগামী গবেষক, লেখক, সাংবাদিক সাহিত্যিক মাহফুজ উল্লাহ মানুষ হিসেবে অত্যন্ত চমৎকার ছিলেন। তিনি ছিলেন সব দল মতের ঊর্ধ্বে একজন ভালো মানুষ। সবাইকে তিনি ভালোবেসেছেন, সবাই তাকে ভালোবাসতেন।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ ভাই দল মতের ঊর্ধ্বে উঠে সবার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়তে পেরেছিলেন। তিনি সবসময় প্রেসক্লাবে আসতেন। গত ৩০ বছর ধরে তিনি আমাদের অভিভাবকের মতো ছিলেন। প্রেসক্লাব দীর্ঘদিন তার অভাব অনুভব করবে।
প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুর রহমান এমপি বলেন, আমরা আমাদের একজন প্রিয় বন্ধুকে হারালাম। সাংবাদিক সমাজ একজন মেধাবী সাংবাদিককে হারালো। আমরা মহসিন হলে একই ফ্লোরে থাকতাম। তিনি বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। আমি ছাত্রলীগ করতাম। আমাদের মধ্যে বিতর্ক হতো, কিন্তু কখনও তিক্ততা হয়নি।
বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ আদর্শ, নীতি, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও সততার প্রমাণ রেখে গেছেন। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আমাদের মধ্যে মতের অমিল থাকলেও তিনি যে বস্তুনিষ্ঠতা চর্চা করে গেছেন সেটা যেন আমরা ধরে রাখতে পারি। প্রধানমন্ত্রী ও সিটি মেয়রকে ধন্যবাদ জানাই তার ইচ্ছা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফনের সুযোগ দেওয়ার জন্য।
জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, ঢাবির সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজ উদ্দিন আহমদ, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্য’র আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বিকল্প ধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী, ডিইউজের একাংশের সাবেক সভাপতি কবি আব্দুল হাই সিকদার, ডিইউজের একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী, প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ প্রমুখ। জানাজার পরে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৯
এমএইচ/জেডএস