ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অন্তত ৩২ করুন: রওশন

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১০ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৯
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অন্তত ৩২ করুন: রওশন সংসদে রওশন এরশাদ

ঢাকা: দেশে ৫ কোটি কর্মক্ষম বেকার থাকার কথা উল্লেখ করে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের উপনেতা রওশন এরশাদ বলেছেন, এই বেকারত্ব কমাতে উদ্যোগ নেয়া দরকার। আর চাকরিতে প্রবেশের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য আন্দোলন চলছে। এক্ষেত্রে ৩৫ বছর না করলেও অন্তত ৩২ বছর করুন।

সংসদের চলতি অধিবেশনের সমাপনী বক্তৃতায় তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের জরিপ অনুযায়ী দেশে কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা সাড়ে ১০ কোটি। এর মধ্যে মাত্র ৫ কোটি মানুষ কাজ করছেন।

বাকি সাড়ে ৫ কোটিই বেকার। এদিকে মনোনিবেশ করা দরকার। যদিও বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে কিছুটা কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে।

এর আগে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে দিনের কাজ শুরু হয়।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি উদ্দেশ্য করে রওশন বলেন, চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ না করে যদি ৩২ করা হয় তাহলে ভালো হয়। তাহলে তাই করেন। প্রধানমন্ত্রী, আপনি তো একজন মা। আপনি চিন্তা-ভাবনা করে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেই আশা করি।  

সংসদে আবারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের একটা খারাপ দিক- রাত জেগে ফেসবুক চালানো। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এক্ষেত্রে অন্তত রাত ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ফেসবুক বন্ধ রাখা যায় কিনা একটু ভেবে দেখবেন।

‘রাতের ওই সময়টায় ফেসবুক বন্ধ করে দেয়া হলে অনেক সংসারও বেঁচে যাবে। পাশাপাশি অনেক ছেলে-মেয়ের জীবন বাঁচবে। কারণ তারা সারারাত জেগে থাকে। ঘুমায় না। এতে পড়াশোনারও অনেক ক্ষতি হয়। ’

সংসদ সদস্য (এমপি) হিসেবে শপথ নিয়ে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ায় বিএনপিকে স্বাগত জানান প্রধান বিরোধী দলের এই উপনেতা।  

তিনি বলেন, সংসদে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তাদের স্বাগত জানাচ্ছি।  

এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি দলীয় এমপিরাও উপস্থিত ছিলেন।  

বক্তব্যে রওশন এরশাদ বলেন, সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় যে ঘটনা ঘটলো তা নিন্দনীয়। এতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত হয়েছি। সংসদে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শোকপ্রস্তাব আনা হয়েছে।  আমরা এ ঘটনার ধিক্কার জানাই। নিউজিল্যান্ডেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।  

‘সারাবিশ্বে সন্ত্রাসী ঘটনা  ঘটেই চলেছে। এটা বন্ধ হচ্ছে না। সেই সঙ্গে নারী নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে। নুসরাতের ঘটনা দেখেছি। শিক্ষর্থীরা আজ শিক্ষকের দারা লাঞ্ছিত হচ্ছে। শিক্ষকের হাতেই যদি ছেলে-মেয়েরা নিরাপদ না থাকে তাহলে তারা লেখাপড়া কার কাছে শিখবে?’ 

তিনি বলেন, সহিংসতার বিষয়ে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। সামাজিক অবক্ষয় যেভাবে বেড়ে চলেছে তা দুঃখজনক। সবমিলিয়ে সামাজিক অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করছে। ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে সমাজের চরম অবক্ষয়। তাই সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে এর বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

‘স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এ ধরনের হীন ঘটনার বিচার করা সম্ভব হলে নির্যাতনের ঘটনা কমবে বলে মনে করি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নিতে পারেন,’ যোগ করেন ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের এমপি রওশন।  

রমজানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বিরোধী দলীয় উপনেতা বলেন, সামনে রমজান মাস। এ সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। অন্য দেশে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্যের দাম কমিয়ে দেয় আর আমাদের দেশে হয় উল্টোটা। প্রতিবছরই এটা হয়ে থাকে।  

তিনি বলেন, রমজান মাসে প্রতিটি জায়গায় ছোট ছোট আকারে ইফতারি বিক্রি করে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তা বিক্রি করা হয়। এসব খাবার পরীক্ষা করা হয় না। এভাবে ইফতারি বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। যেনো মানুষ অখাদ্য না খেতে পারে।  

জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান রওশন বলেন, বহুতল ভবনগুলোতে আগুন নেভানোর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। রাজউক চেষ্টা করে কিন্তু কেউ কথা শোনে না। ভবনগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা যদি সততার সঙ্গে কাজ করেন তাহলে আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা কমতে পারে।  

ওয়াসার পানি নিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, ঢাকায় আমরা যে পানি পান করছি তা ময়লাযুক্ত ও দুর্গন্ধময়। সুপেয় পানি পাওয়া অনেক দুরূহ ও কঠিন ব্যাপার।  

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই যেনো সুপেয় পানি পায় সে বিষয়ে আপনি পদক্ষেপ নেবেন।  

এ সময় পাটকল শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার কথাও বলেন তিনি। একই সঙ্গে শেয়ারবাজার ও ব্যাংকিং খাত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন রওশন এরশাদ।  

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারে তো শুরু থেকে ধস নেমে এসেছে। এখন আগের যুগের মতো মাটির ব্যাংকে টাকা রাখতে হবে বলে মনে করছি। ব্যাংক ও শেয়ারবাজার যেনো ভালোভাবে চলে সেদিকে নজর দিতে হবে। শেয়ারবাজারে ছোট ছোট বিনিয়োগকারীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।  

জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে রওশন বলেন, জঙ্গিবাদ এখন সারাবিশ্বে একটি বড় সমস্যা। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমার মনে হয় আমাদের দেশে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিলো ১৯৭৫ সালে। তখন জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়। তখন থেকে আমরা জঙ্গি হামলার সম্মুখীন হচ্ছি।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৯
এসকে/আরএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।