বৃহস্পতিবার (৮ মে) সন্ধ্যায় মোস্তাফা জব্বার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘আমি অন্তত একটি বিষয় বুঝতে পারিনা যে, ডিজিটাল যুগে বসে আমাদের ভাবনাটা এতো পেছনে কেন? লাউয়াছড়ায় টেলিটকের টাওয়ার বানানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই টাওয়ারে গাছপালা ও বন্যপ্রাণীর নাকি ক্ষতি হবে।
এদিকে মোস্তাফা জব্বারের এ স্ট্যাটাসের জবাবে পরিবেশ গবেষকরা ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোবাইল টাওয়ার থেকে যে রেডিয়েশন তৈরি হয় তা প্রাণ ও প্রকৃতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সে হিসেবে দেশের একটি সংরক্ষিত বনের মধ্যে মোবাইল নেটওয়ার্কের টাওয়ার বসানো মানে পরিকল্পিতভাবে প্রাণ ও প্রকৃতির ক্ষতি করা। রাষ্ট্রয়াত্ত্ব প্রতিষ্ঠানের কাণ্ডজ্ঞানহীন এ কাজকে দায়িত্বশীলতার অভাব বলে আখ্যায়িত করে ইতিমধ্যে লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয়রা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বন্যপ্রাণী বিশেষঞ্জ ড. মনিরুল এইচ খান বাংলানিউজকে জানান, মোবাইল টাওয়ারের রেডিয়েশনের প্রভাবে বনের ক্ষতি শুধু নয়, পাখির বাসায় ডিম থাকলে তা নষ্ট হয়ে যায়। একটি সংরক্ষিত বন বন্যপ্রাণীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে এটাই স্বাভাবিক। সেখানে মোবাইল টাওয়ারের কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনা। এ টাওয়ার বসানো হলে লাউয়াছড়া বনে ধ্বংস ডেকে আনবে।
এ ব্যাপারে লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা আন্দোলনের সদস্য জাবেদ ভুঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করে মোবাইল টাওয়ার বসানো কোনো অবস্থায় যুক্তিসংজ্ঞত না। এমনিতেই এ সংরক্ষিত বন রক্ষা করা যাচ্ছেনা গাছ চোরদের কারণে। সেখানে টাওয়ার বসালে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে গাছ ও প্রাণী পাচার সহজ হয়ে যাবে। তারপরও সেখানকার আধিবাসীদের জন্য নেটওয়ার্ক জরুরি হলে শহরের আশপাশের টাওয়ারের ফিকোয়েন্সি বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে, যাতে তারা ন্যূনতম নেটওয়ার্ক পায়।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এম শামসুল মোহিত চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, টাওয়ার করার ব্যাপারে ‘টেলিটক’ আমাদের থেকে কোনো অনুমোদন নেয়নি। বর্তমানে টাওয়ারটি স্থাপনের কাজ বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করছি।
এব্যাপারে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, লাউয়াছড়া বনের মধ্যে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে সরকারের বিশেষ উদ্যোগে টাওয়ারটি বসানো হচ্ছে। মোবাইল নেটওয়ার্কের টাওয়ার বন্যপ্রাণীর ক্ষতি করবে বলে আমার কাছে বিজ্ঞানসম্মত কোনো যুক্তি নেই। এটা যদি প্রাণীদের ক্ষতি করে তাহলে মানুষের কী অবস্থা হতে পারে সে চিন্তা করলে তো দেশের সব টাওয়ার বন্ধ করে দিতে হবে।
বনবিভাগ বা পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলে অনুমতির প্রয়োজন হতো। আমাদের টাওয়ার করতে কোনো অনুমতি লাগেনা। আমি বন বিভাগের কাছে সুপারিশ করেছি তারা যাতে টাওয়ার স্থাপনে বাধা না দেয়।
লাউয়াছড়া বনের দুই কিলোমিটারের মধ্যে ডলুছড়ার অবস্থান। পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই সোমবার (৬ মে) থেকে মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের কাজ শুরু করে। ইতিমধ্যে টাওয়ার স্থাপনের জন্য মাটি কেটে বড় বড় গর্ত তৈরি করেছেন শ্রমিকরা। টাওয়ার তৈরির জন্য আনা হয়েছে বড় বড় রড। পরিবেশ অধিদফতরের অনুমোদ ছাড়া এ টাওয়ার বসানোর হলে লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা পরিবেশবাদীদের এবং প্রাণী বিশেষজ্ঞদের। এছাড়াও বনে টাওয়ার বসালে নেটওয়ার্ক শক্তিশালী থাকলে এতে গাছ চোর চক্র নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সহজেই বনে অপকর্ম করতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৯
এসএইচ