শুক্রবার (১৭ মে) কক্সবাজার পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, জঙ্গি হামলাসহ যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রামুর ২৭টিসহ ১২৯টি বৌদ্ধ বিহারে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশের পাশাপাশি আনসার, র্যাব এবং সাদা পোশাকেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন দায়িত্ব পালন করবেন বলে যোগ করেন এসপি মাসুদ।
এদিকে মহামতি বুদ্ধের ত্রিস্মৃতি বিজড়িত এইদিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনে বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বুদ্ধপূজা, জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, অষ্ট-পঞ্চশীল গ্রহণ, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কারদান, হাসপাতালে রোগীদের খাদ্যদান, শান্তি শোভাযাত্রা, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, আলোকসজ্জ্বা, ধর্ম দেশনা শ্রবণ, দেশ এবং বিশ্বশান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন রাখা করা হয়েছে। বিশেষ করে বৌদ্ধ পুরাকীর্তির শহরখ্যাত সম্রাট অশোক নির্মিত রামুর রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার, রামু কেন্দ্রীয় মহাসীমা বিহার, রামু মেত্রী বিহারসহ উপজেলার ২৭টি বৌদ্ধ বিহারে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশি বৌদ্ধদের তীর্থস্থান রামু রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ জ্যোতিসেন থের বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার বিকেল ৪টায় ১০১জনকে শ্রামন ও ১০জনকে ভিক্ষু হিসাবে প্রবজ্যাদানের মধ্য দিয়ে এ বিহারে পূর্ণিমার অনুষ্ঠান শুরু হবে। এরপর সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হবে বুদ্ধ কীর্তন, রাত ১২টা ১মিনিটে পূজা সাজানো এবং শনিবার ভোর ০৪টা ০১ মিনিট থেকে বুদ্ধ পূজা উত্তোলন শুরু করা হবে।
তিনি বলেন, দেশের বৌদ্ধদের কাছে অতি পবিত্র তীর্থস্থান এই রাংকূট বনাশ্রম বৌদ্ধ বিহার। তাই প্রতিবছর এইদিনে হাজার হাজার পূণ্যার্থীর সমাগম হয় এখানে। তাই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এ বিহারে কয়েকস্থরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহা বিহারের সহকারী পরিচালক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বাংলানিউজকে বলেন, বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে জঙ্গি হামলার বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটু ভয়-ভীতি কাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ পরিবেশে বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপিত হবে। তবুও অমরা অনেক সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছি। প্রতিটি বিহারের নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। প্রশাসনও বেশ তৎপর রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী কক্সবাজার সদরে ১৪টি, রামুতে ২৭টি, উখিয়ায় ৪১টি, টেকনাফে ১৭টি, চকরিয়ায় ২১টি,পেকুয়ায় ১টি, মহেশখালীতে ৮টিসহ মোট ১২৯টি বৌদ্ধ বিহার রয়েছে। প্রতিটি বিহারেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ২০১২ সালের রামুর বৌদ্ধ বিহারে হামলা এরপরে যোগ হয় রোহিঙ্গা সমস্যা। বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে উখিয়া টেকনাফে। তাই নানা কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কক্সবাজারের এখন ব্যাপক পরিচিত। তাই এবারের বুদ্ধপূর্ণিমায় যে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা মোকাবিলায় পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষভাবে কাজ করছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ ৩০ থেকে ৪০টি বিহার সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। আশা করছি, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা শান্তিপূর্ণভাবে এ উৎসব উদযাপন করতে পারবে।
খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে জন্ম হয় মানবপুত্র সিদ্ধার্থের। সেদিন ছিল শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথি। ঊনত্রিশ বয়সে তিনি সংসার ত্যাগ করে গভীর সাধনায় আত্মনিয়োগ করেন। অবশেষে দীর্ঘ ছয় বছর কঠোর সাধনার পর পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে তিনি সম্যক বুদ্ধত্ব ফল লাভ করেন। সেদিনও ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা। এরপর পয়তাল্লিশ বছর ধর্মপ্রচার করে পঁচাশি বছর বয়সে তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। সেই দিনটাও ছিল বৈশাখী পূর্ণিমা। একই দিনে জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ এবং মহাপরিনির্বাণ লাভের ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় বৈশাখী পূর্ণিমার অপর নাম বুদ্ধপূর্ণিমা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৯
এসবি/এএটি