পরে তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
তার শারীরিক অবস্থার তথ্য জানাতে শনিবার (২৯ জুন) দুপুরে রামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে সংবাদ সম্মেলন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখানে হাত হারানো ফিরোজের শারীরিক অবস্থার এমন তথ্যই তুলে ধরেন হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. আলমগীর হোসেন।
ফিরোজের সার্বক্ষণিক দেখভালের দায়িত্বে থাকা ডা. আলমগীর বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে আনার পরপরই তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের পর তাকে কিছুক্ষণের জন্য আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পর রাতেই তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে, দুর্ঘটনায় ছাত্রের হাত হারানোর ঘটনায় থানায় এখনও কোনো মামলা হয়নি বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) গোলাম রুহুল কুদ্দুস।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনায় জড়িত বাস বা ট্রাকের কাউকে এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। দ্রুত ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তবে মামলা না হলেও এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন মহানগরের কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ। তিনি বলেন, গত রাতেই থানায় দু’টি জিডি করেছেন। মামলা হয়নি। তবে বর্তমানে ফিরোজের বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মামলা হলে দোষী চালকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে।
জানতে চাইলে ওসি বলেন, ফিরোজ কোন বাসের যাত্রী ছিলেন এবং কোন বাসের সঙ্গে চাপা লেগেছে তা এখনো তারা নিশ্চিত হতে পারেননি। পাশের গাড়িটি বাস ছিল নাকি ট্রাক সেটাও জানতে পারেননি। তবে সব বিষয় নিশ্চিত হতে পুলিশ কাজ করছে।
রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ফিরোজ জানান, তিনিও জানেন না, তার বাসের পাশ দিয়ে যাওয়া গাড়িটি বাস নাকি ট্রাক। ওভারটেকিং নাকি ক্রসিং কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটিও তিনি জানেন না। তবে দুই চালকের দোষে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ফিরোজ মনে করেন। তাই তিনি শাস্তি চান দোষী দুই চালকের।
ফিরোজ সরদার রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। বগুড়ার নন্দীগ্রাম পৌরসভার নামোইট গ্রামে তার বাড়ি। বাবার নাম মাহফুজ আর রহমান। ফিরোজের মাস্টার্সের পরীক্ষা চলছে। দু’টি পরীক্ষা দিয়েছেন।
শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা দিতে বগুড়া গিয়েছিলেন। এরপর বাড়ি যান। সেখান থেকে শুক্রবার ফিরছিলেন রাজশাহী। পথে রাজশাহী মহানগরের উপকণ্ঠ কাটাখালী এলাকায় পাশের গাড়ির চাপায় তার ডান হাত কনুইয়ের ওপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
ঘটনার পর বাসটি ফিরোজকে রাজশাহী মহানগরের তালাইমারী পর্যন্ত নিয়ে আসে। বাসেই ছিলেন ফিরোজের একজন সহপাঠী ও দূর সম্পর্কের এক নানা। তারা তাকে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে কাটা হাত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় কাটাখালী থানার পুলিশ। কিন্তু চিকিৎসক জানান, এ হাত আর কাজে লাগবে না। পরে রাতেই অপারেশন থিয়েটারে তার কেটে যাওয়া হাত পরিস্কারের পর সেলাই করে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদ ও জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে রাজশাহী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি এ কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন- রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মো. হাবিবুর রহমান, সমাজকর্ম বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জোবাইদা আক্তার প্রমুখ।
কর্মসূচিতে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
শুক্রবার (২৮ জুন) সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানরের কাটাখালী পৌরসভার সামনে দুই বাসের চাপায় ফিরোজের ডান হাত কনুই থেকে কাটা পড়ে। ফিরোজ রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
গত ২২ জুন থেকে ফিরোজের মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়েছে। রোববার (৩০ জুন) তার পরীক্ষা রয়েছে। শুক্রবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অংশ নেওয়ার পর বগুড়া থেকে একটি বাসে রাজশাহী ফিরছিলেন তিনি। ফেরার পথে এ দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৩ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৯
এসএস/আরবি/