ঢাকা, রবিবার, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বাংলাদেশের সঙ্গে কারো বৈরিতা নেই: প্রধানমন্ত্রী

মহিউদ্দিন মাহমুদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০১৯
বাংলাদেশের সঙ্গে কারো বৈরিতা নেই: প্রধানমন্ত্রী নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

বেইজিং, চীন থেকে: আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কারো বৈরিতা নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (৩ জুলাই) বিকেলে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের একটি হোটেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গেলে অনেকেই জিজ্ঞাসা করে।

এবারেও এ প্রশ্নটা শুনতে হয়েছে যে, চীন এবং ভারত দুই দেশের সঙ্গেই বন্ধুত্ব রাখেন কীভাবে? আমি বললাম, অসুবিধাটা কোথায়? আমাদের প্রতিবেশি দেশ। আমার তো সবার সঙ্গেই সম্পর্ক।

তিনি বলেন, সবার সঙ্গেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সেজন্য এগিয়ে যাচ্ছি, বাংলাদেশে বিনিয়োগ আসছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে নীতি দিয়ে গেছেন, অক্ষরে অক্ষরে সেই নীতি পালন করে এখন বাংলাদেশের কারো সঙ্গে কোনো বৈরী সম্পর্ক নেই।

ভারতের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় এবং মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সারাবিশ্বে ছিটমহল বিনিময় নিয়ে যুদ্ধ হয়। আমরা যে ছিটমহল বিনিময় করলাম সারাবিশ্বের কাছে এটা একটা দৃষ্টান্ত। একটা উৎসবমুখর পরিবেশে এ ছিটমহল বিনিময় করেছি।  

চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

চীনের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, চীন ৭০ বছর উদযাপন করতে যাচ্ছে। এ ৭০ বছরের মধ্যে চীনও কিন্তু একটা দরিদ্র দেশই ছিল। আজ সেই দেশ অর্থনৈতিকভাবে সারাবিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

তিনি বলেন, তাদের ইতিহাস জানা, ধীরে ধীরে তাদের যে উন্নতি। তাদেরও অনেক প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। এখনো বাধা। এ অঞ্চল বা এশিয়ার কোনো দেশ সারাবিশ্বে এক নম্বর অর্থনীতির দেশ হিসেবে গড়ে উঠুক এটা অনেকে চাইবে না। সেই বাধা আমরা দেখি।

যুদ্ধবিধ্বস্ত জাতি গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে যেতো।

জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা দারিদ্র মুক্ত সোনার বাংলার গড়ার প্রত্যয় পুনব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছিলেন, সে স্বপ্ন অর্জন করাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। এটাই আমাদের চেষ্টা কীভাবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো। এমন একটা বাংলাদেশ গড়ে তুলবো যেখানে ক্ষুধা-দারিদ্র থাকবে না।

বাজেট বরাদ্দ ও উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে বিদেশি অর্থের ওপর নির্ভরশীলতা কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন বাজেটের ৯০ শতাংশ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। যে বাজেট করি এ বাজেটে কিন্তু বিদেশি অনুদানের অংশ হচ্ছে মাত্র শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। অথচ এমন একটা সময় ছিল যখন বাজেটের সিংহ ভাগই আসতো অনুদান হিসেবে।

সব কাজ করার মানসিকতা রাখার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করছি, সেই সঙ্গে উৎসাহিত করছি। একেবারে দুই পাতা পড়লেই যে কৃষি কাজ করা যাবে এ মানসিকতা পরিহার করতে, এ মানসিকতা থাকতে পারবে না। সবাইকে সব কাজ করতে হবে।

আধুনিক প্রযুক্তি শেখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাণিজ্য কূটনীতির কথা উল্লেখ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন কূটনীতিটা শুধু রাজনৈতিক নাই, কূটনীতি এখন অর্থনৈতিক ও ব্যবসা-বাণিজ্য। বিনিয়োগ আনা। শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তবে দেশকে ভুললে চলবে না। দেশের জন্য কাজ করতে হবে।  

বাংলাদেশের অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন সবাই বাংলাদেশের প্রশংসা করছে। কিন্তু আমাদের অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে। প্রশংসা শুনে বসে থাকলে চলবে না এগিয়ে যেতে হবে, আরও কাজ করতে হবে।  

স্বাধীন বাংলাদেশে ২৯ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে বিগত ১০ বছরে তার চেয়ে বেশি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা স্বাধীনতা চায়নি, মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীতা করেছে, এখনো ‘পাকি’ প্রেমে বিভোর হয়ে থাকে তারা ক্ষমতায় আসলে দেশের উন্নতি হবে কীভাবে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের দল ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন হয় মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকলে দেশ উন্নত হয় প্রমাণটা আপনারা দেখেছেন।

তিনি আরো বলেন, কিছু লোক আছে যাই করি তারা কিছু দেখতে পায় না। আসলে তাদের উদ্দেশ্য এরা গণতন্ত্র চায় না, কারণ গণতন্ত্র না থাকলে তাদের সুবিধা হয়, বিশেষ মূল্যায়ন হয়।  

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যায় জড়িতদের তথ্য একদিন সামনে আসবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, খুনীদের বিচার করেছি, এটা ঠিক। কিন্তু এর পেছনে যারা ছিল, ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কারা জড়িত সেটা কিন্তু এখনো তদন্ত করা হয়নি। আমার মনে হয় একটা সময় আসবে সেই সত্যগুলোও মানুষের সামনে চলে আসবে।  

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করেছিল কারা। যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি। বা মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর ছিল, যারা চক্রান্ত করেছিল। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলবো এর সঙ্গে আমাদের নিজেদেরও কিছু লোক সম্পৃক্ত হয়েছিল ক্ষমতার লোভে।  

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. ফজলুল করিম।

চীনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার শামসুল হক।

** পেছন থেকে বঙ্গবন্ধু খুনে জড়িতদের তথ্য সামনে আসবে

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৯
এমইউএম/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।