বুধবার (১০ জুলাই) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। টেবিলে উত্থাপিত এ প্রশ্নের সময় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।
প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনীয় এক শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদ। এসময়ের মধ্যে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রায়িত হবে; সরকারি ব্যয়ের সিংহভাগ বাস্তবায়িত হবে স্থানীয় পর্যায়ে, এ দায়িত্ব পালন করবে স্থানীয় প্রশাসন। পরিকল্পনা করা হবে স্থানীয় প্রশাসন ও কেন্দ্রের সুস্পষ্ট সমন্বয়ের মাধ্যমে; সুশাসন, জনগণের সক্ষমতা ও ক্ষমতায়ন হবে এই অগ্রযাত্রার মূলমন্ত্র। নারীর ক্ষমতায়ন, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, শিক্ষার প্রসার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হবে এই অগ্রযাত্রার নিয়ামক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়ছে, রপ্তানি এবং প্রবাস আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাজেট ঘাটতির পরিমাণ জিডিপি’র পাঁচ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমন পরিবেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সামনের দিনগুলোতে আরও বেগবান হবে। সোনার বাংলায় ‘দারিদ্র্য’ হবে সুদূর অতীতের কোনো ঘটনা।
তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘের বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা ও সম্ভাবনা- ২০১৯’ প্রতিবেদনে শীর্ষ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে। জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে ২০১৮ সালে সবচেয়ে দ্রুত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী ১০টি দেশের মধ্যে (৭ ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধি অজর্নকারী) বাংলাদেশ একটি। এই ১০টি দেশের তালিকায় এশিয়া অঞ্চলে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল প্রকাশিত ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক, এপ্রিল ২০১৯’- এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী তিনটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, যা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এবং ভারতের প্রবৃদ্ধির সমান। এই তালিকায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে প্রথম স্থানে অছে রুয়ান্ডা, যার পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূলে রয়েছে আমাদের সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ ও তার দক্ষ বাস্তবায়ন। ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী ইশতেহার দিন বদলের সনদের অঙ্গীকার অনুযায়ী অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়। আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এমন পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি যে, পদ্মাসেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। পদ্মাসেতুসহ আমরা ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এসব পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ২০১৫ সালে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণে সক্ষম হয়েছি। জাতিসংঘ আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এটি দেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন ও স্বীকৃতি। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য অবশ্যই একটি বড় অর্জন। আশা করছি, আমরা উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবো। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সমৃদ্ধ ও উন্নত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় দুঃখী ও অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্য পূরণে নিরলসভাবে কাজ করতে আমি ও আমার সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।
বাংলাদেশ সময়: ২২২১ ঘণ্টা, জুলাই ২০১৯
এসকে/জেডএস