সোমবার (১৫ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবে ওজোপাডিকোর প্রি-পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
১২ দফা দাবি আদায়ে ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামী মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এবং বুধবার (১৭ জুলাই) বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া, বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যানের কাছে বিভাগীয় পরিচালকের মাধ্যমে স্মারকলিপি দেওয়া, ১৯ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সংগ্রাম কমিটির থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা, পুরো আগস্ট মাসজুড়ে ২১ জেলায় মতবিনিময় সভা এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কনভেনশন।
১২ দফা দাবি হলো- বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ইতোমধ্যে প্রতিস্থাপন করা প্রি-পেইড মিটারের জামানতের টাকা ফেরত দেওয়া, ২০০ কোটি টাকার রিবেট ২ কোটি টাকা তিন বছর আটকে রাখার লভ্যাংশ গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া, পূর্বের আত্মসাৎকৃত রিবেটের টাকা আলাদা লাইনে নয়, সহজে ফেরত দেওয়া, ওজোপাডিকোর সদর দফতরকে জনগণের জন্য উম্মুক্ত করা, অকেজো ডিজিটাল মিটারের মূল্য পরিশোধ করা, মিটার স্থানান্তরের সময় টাকা বা ফি না নেওয়া, ওজোপাডিকোর সব ধরনের দুর্নীতি বন্ধ করা, ফ্রি মিটার দেওয়ার নাম করে ভাড়া নেওয়া বন্ধ করা, অবৈধ পন্থায় মিটার আমদানি বন্ধ করা, লক ছাড়াতে ফি নেওয়া বন্ধ করা, পূর্বের জামানতের টাকা ফেরত দেওয়া এবং বাড়তি সংযোগ ফি না নেওয়া।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ডা. শেখ বাহারুল আলম।
বক্তব্যে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশের বিদ্যুৎখাতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বে যখন ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগানে দেশ ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখনই খুলনাসহ পদ্মার এপারের একুশ জেলা নিয়ে গঠিত ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ দু’একজন কর্মকর্তা এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের নিষ্পেষণের জালে নিমজ্জিত করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রি-পেইড মিটার নামক ‘যন্ত্রদানব’ খুলনার গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ওজোপাডিকো নিজেদের ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে, তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি জনগণের স্বার্থে আন্দোলন শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রি-পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে সংগ্রাম কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এক পর্যায়ে বিষয়টি খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের দৃষ্টিতে আসলে তিনি উভয়পক্ষকে নিয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন।
গত ২৬ জুন কেসিসির সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মেয়র ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) সংগ্রাম কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে পরবর্তী সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দেন। কিন্তু এ পর্যন্ত ওজোপাডিকোর পক্ষ থেকে কোনো বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উল্টো সংগ্রাম কমিটির পক্ষ থেকে বৈঠকের অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি ওজোপাডিকোর এমডি বরাবর লিখিতপত্র দেওয়া হয়। সেই পত্রের কপি ডাকযোগে পাঠানো ছাড়াও ওজোপাডিকোর এমডি, নির্বাহী পরিচালক (অর্থ), নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) এবং কোম্পানি সচিবের নিজস্ব ইমেইলেও পাঠানো হয়। অথচ এখন পর্যন্ত সংগ্রাম কমিটির সঙ্গে বৈঠক করে প্রি-পেইড মিটারের সমস্যা সমাধান ও কোম্পানির কর্মকর্তাদের দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে টুটপাড়ার একজন গ্রাহককে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার ব্যাপার নিয়ে রোববার (১৪ জুলাই) সংগ্রাম কমিটির প্রতিনিধিরা ওজোপাডিকো সদর দফতরে উপস্থিত হয়ে কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) রতন কুমার দেবনাথ ও নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশল মো. আবু হাসানের সঙ্গে কথা বলে গ্রাহক হয়রানির এমন অপকৌশল থেকে তাদের বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ১২ দফা দাবি উপস্থাপন করে এসব দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত জনগণকে প্রি-পেইড মিটার প্রত্যাখ্যান করার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সংগ্রাম কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শরীফ শফিকুল হামিদ চন্দন ও নূর মোহাম্মদ শেখ, সদস্য সচিব মহেন্দ্রনাথ সেন, যুগ্ম সদস্য সচিব শাহ মামুনুর রহমান তুহিন, তপন রায়, মফিদুল ইসলাম, শেখ আব্দুল হালিম, রুহুল আমিন সিদ্দিকী, অ্যাডভোকেট মেহেদী ইনসার, জিএম রাসেল ইসলাম, মাহবুবুল আলম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৯
এমআরএম/এসএ