বুধবার (২৮ আগস্ট) সকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজার ঘুরে দেখা যায় এ দৃশ্যই। হাতলওয়ালা পলিথিনের ব্যবহার হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত।
সকালে কাঁচাবাজর থেকে সবজি কিনে পলিব্যাগে করে নিয়ে যাচ্ছিলেন কারওয়ানবাজারের বাসিন্দা একরামুল হক। তিনি বলেন, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হলেও সবাই ব্যবহার করছে। পলিথেনের বিকল্প হিসেবে অন্য কোনো ব্যাগ বাজারে তেমন একটা দেখা যায় না। আর বিক্রেতারাও পণ্যগুলো পলিথিনে দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
সহজপ্রাপ্তি আর মূল্য কম হওয়ায় অন্য ব্যাগের পরিবর্তে পলিথিনে আগ্রহ বেশি বলে জানান খুচরা ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে বাজারের বিভিন্ন খুচরা ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সরকার পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেও বাজারে এখনও পলিথিনর সরবরাহ রয়েছে। বরং পাট বা অন্য ব্যাগের সরবরাহ কম। আর পলিথিন দামেও সস্তা। তাই পলিথিন ব্যবহারের প্রতিই তারা আকৃষ্ট।
পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, মজুদকরণ ও সংরক্ষণ আইন-২০০২ নিষিদ্ধ হওয়ার পর সারাদেশে কমে যায় পলিথিনের ব্যবহার। তবে সেই সোনালি দিন খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই চিত্র পাল্টে যায়। সব জায়গায় আবারও ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশদূষণকারী পলিব্যাগ।
এ প্রসঙ্গে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম বলেন, এটা ঠিক যে কাগজ ও পাটের ব্যাগের ব্যবহার আমাদের পলিথিনের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করতে পারে। তবে তার জন্য পাট ও কাগজের ব্যাগের ইতিবাচক দিক, স্বল্পমূল্য ও সহজ প্রাপ্তির বিষয়টি আগে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সবাই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের বিপক্ষে, কিন্তু পাট বা পরিবেশবান্ধব ব্যাগগুলোর সহজপ্রাপ্তি এখনও নিশ্চিত নয়। তাই পলিথিন ব্যবহার করতে হয়।
এসময় তিনি এ বিষয়ে সরকারের নজরদারির বিষয়টিও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধে সরকারের ব্যাপক নজরদারি চালাতে হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন এমন কোনো কিছুই নজরে আসেনি। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতরের পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনেরও সদিচ্ছা ও তদারকি থাকা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের রিসার্স ফেলো হাসান নিটোল বলেন, পরিবেশদূষণে মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিনের নিয়মিত ব্যবহার দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। অপচনশীল এ পদার্থ পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে মাটি-পানি দূষিত হচ্ছে।
এছাড়া বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের পাশাপাশি পলিথিন প্রস্তুতকারী কারখানায় উৎপাদন বন্ধ করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে গণমাধ্যমে এ বিষয়ে আরও বেশি প্রচারণা চালোনো প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রচার) সমর কৃষ্ণ দাস বাংলানিউজকে বলেন, পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন ও বাস্তবায়ন দুটোই রয়েছে। আমরা সব সময়ই কাজ করে যাচ্ছি। ভ্রাম্যমাণ টিম নিয়মিত তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। সাভার, নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে প্রচুর পরিমাণ পলিথিন ধ্বংস এবং ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়েছে। শহরের পাশাপাশি জেলা শহরগুলোতেও আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে যতক্ষণ না মানুষ সচেতন হবে, ততক্ষণ পুরোপুরিভাবে এটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, জনগণকে সচেতন করার জন্য আমরা বিভিন্নভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এ মাসের প্রথম দিকেও কারওয়ানবাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ বিষয়ে সচেতনতামূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা পলিথিন ব্যবহার করবেন না বলেও জানিয়েছেন। বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে পলিথিন ব্যবহার করে জ্বালানি তৈরির যে কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে, সেটিও বেগবান করা যেতে পারে। এতে ব্যবহৃত পলিথিনগুলোর ছড়ানো-ছিটানো অবস্থা ও পরিবেশদূষণের পরিবর্তে তা থেকেও ভালো কিছু অর্জন করা সম্ভব হবে।
আর পাটের ব্যাগের সরবরাহ বাড়লে এবং জনগণ একটু সচেতন হলে বিষয়টি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলেও মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০১৯
এইচএমএস/এএ