কবির সেই বিখ্যাত কবিতাকে ধারণ করে প্রশাসনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সামাজিক কাজে নিজেকে সামিল করেছেন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আশরাফুজ্জামান।
নিজ কর্ম এলাকায় ভূমিষ্ঠ নবজাতক শিশুর জন্য প্রত্যেকের নিজ নিজ আঙিনায় রোপণ করছেন একটি করে বৃক্ষ।
পাবনা সদর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ভাঙ্গুড়া উপজেলা। জেলার পুরাতন জনপদের মধ্যে অন্যতম উপজেলা এটি। নদী, বিল আর কৃষি সমৃদ্ধ এ উপজেলা সারা বাংলাদেশে বেশ পরিচিত নাম। সরকারি বেশকিছু প্রতিষ্ঠান এ উপজেলায় রয়েছে। আর সব প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন ইউএনও। সরকারের দেয়া সব দায়িত্ব পালন করে নিজ মানবিক গুণে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন সাধারণ মানুষের কাছে। চলতি মাসের প্রথম থেকে এ অঞ্চলে ভূমিষ্ঠ নবজাতক প্রত্যেকটি শিশুর জন্য রোপণ করছেন একটি করে বৃক্ষ। আর মায়ের জন্য থাকছে ফুলের শুভেচ্ছা।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলার ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের চর-ভাঙ্গুড়া খাঁপাড়া গ্রামে একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর পাওয়ার পরপরই ফুলের তোড়া ও চারা গাছ নিয়ে সেখানে হাজির হন ইউএনও। দুপুরে চর-ভাঙ্গুড়া খাঁপাড়া গ্রামের সাইদ মোল্লার স্ত্রী আলফা খাতুনের এক নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণ করে।
এদিকে (১ সেপ্টেম্বর) রোববার উপজেলার হাসপাতাল পাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী বিউটি খাতুনের হুসাইন নামে এক নবজাতক শিশু এবং একই দিনে উপজেলার দক্ষিণ সারুটিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মায়া খাতুনের রাকা খাতুন নামে এক নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণ করে।
পরে ইউএনও প্রত্যেক নবজাতক ও প্রসূতি মায়ের জন্য ফুলের তোড়া উপহার দেন এবং তাদের বাড়ির আঙিনায় নিজ উদ্যোগে একটি করে বৃক্ষের চারা রোপণ করেন। ফলে ওই বাড়িতে আনন্দের নতুন মাত্রা যোগ হয়। আর এ নতুন উদ্যেগে বেশ খুশি নবজাতক পরিবার।
এ উদ্যোগের বিষয়ে কথা হয় সম্প্রতি জন্ম নেওয়া একটি পরিবারের অভিভাবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, যে কাজটি এলাকার রাজনীতিবিদদের করা উচিৎ, সেই কাজটি প্রশাসনের মানুষ করছে। আমাদের মত এ গরিব মানুষের ঘরে ইউএনও স্যার এসেছেন ফুল দিতে, আবার একটা গাছের চারাও লাগিয়ে দিয়েছেন। এটি সত্যিই ভালো একটি কাজ। তবে সর্বপরি তিনি একজন ভালো মানুষ। আমাদের সন্তান যেন স্যারের মত হন।
এ কার্যক্রম নিয়ে কথা হয় ইউএনও সৈয়দ আশরাফুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, যে কাজটি আমি শুরু করেছি, এতে নবজাতক শিশুর মা-বাবা, পরিবার দিনটি স্মরণীয় করে রাখবে। আমি চাই, দেশের প্রত্যেকটা জেলায় যেসব নবজাতক শিশু জন্মগ্রহণ করছে, তাদের জন্য সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখে যাওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার।
তিনি বলেন, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। প্রকৃতির ভারসাম্য আর আগামী দিনের ভরপুর অক্সিজেনের জন্য গাছের বিকল্প নাই। তাই আমি এ কাজটি আনন্দের সঙ্গে করছি। মায়েদের আমরা সচারাচর শুভেচ্ছা দেই না। কিন্তু একটি শিশু দীর্ঘ সময় মায়ের পেটে থাকার পরে নির্দিষ্ট সময়ে পৃথিবীর মুখ দেখে। সে কারণে মায়ের প্রতি আমাদের যত্নবান হওয়া দরকার। আমি মায়েদের একটু ভালোবাসার চেষ্টা করেছি।
মা নতুন শিশুর যত্নের পাশাপাশি ভালোবাসায় গাছটিরও পরিচর্যা করবেন। আর এ গাছটি একদিন ভবিষ্যতের ডিপোজিট হয়ে উঠবে। আর এ গাছ যখন তার অর্থনৈতিক সহযোগিতা করবে, তখন আমার কার্যক্রম সার্থক হবে বলে আমি মনে করি। তবে সমাজের প্রত্যেকেই এ ধরনের কাজে এগিয়ে আসা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৯
আরবি/