ঢাকার এসব ক্যাসিনো পরিচালনার শুরু থেকেই নেপালি নাগরিকদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। যারা ক্যাসিনোর বোর্ড পরিচালনার পাশাপাশি বাংলাদেশিদের এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দিতেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অভিযান শুরুর দিন থেকেই জড়িত সব নেপালি গা ঢাকা দিয়েছেন। তাদের সন্ধানে বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়েও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে তাদের কেউ কেউ দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
জানা যায়, ঢাকার ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা শুরু হয় নেপালি নাগরিক দীনেশ মানালি ও রাজকুমারের হাত ধরে। তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন বিনোদ মানালি। পরে তাদের হাত ধরেই অজয় পাকরাল, হিলমি, ছোট রাজকুমার, কৃষ্ণা ঢাকার বিভিন্ন ক্যাসিনোতে কাজ শুরু করেন। চাহিদা অনুযায়ী ঢাকায় বিভিন্ন ক্লাবে নেপালি নাগরিকদের যোগানও দিতেন দীনেশ ও রাজকুমার।
সূত্র জানায়, ঢাকার বিভিন্ন ক্যাসিনোতে শতাধিক নেপালি কাজ করতেন। তাদের কেউ কেউ প্রতিদিন মোট লাভের ২০ শতাংশ পেতেন। আবার অনেকে উচ্চ বেতনে চাকরি করতেন। নেপালিরা মূলত ক্যাসিনো ম্যানেজমেন্টের কাজ করতেন। ক্যাসিনো পরিচালনায় তারা বেশ দক্ষ। নেপালের নাগরিকদের বেতন অন্যদেশের ক্যাসিনো অপারেটরদের তুলনায় কম বলে ঢাকায় তাদের চাহিদা বেশি ছিল। তাদের মাধ্যমে বিপুল অর্থ পাচার হয়ে আসছিল।
জড়িতদের মধ্যে বেশ কিছু নেপালি নাগরিক সেগুনবাগিচার কয়েকটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। কিন্তু ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে ক্যাসিনোতে অভিযান শুরুর পর তারা সটকে পড়েন। এদিন ভোরেই ওই বাসাগুলোতে অভিযান চালিয়ে র্যাব কাউকে পায়নি। পরে সেসব বাসা থেকে তাদের কিছু কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে।
র্যাব জানায়, সেগুনবাগিচার একটি বাসাতেই ভাড়া থাকতেন নেপালের নয়জন ক্যাসিনো পরিচালনাকারী। তাদের ক্লাবের প্রশিক্ষক পরিচয় দিয়ে বাসাটি ভাড়া করে দেন মোহামেডান ক্লাবের কর্মকর্তা মো. মাছুম। ওই ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ১৮ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত ১০টার পর তিনজন লোক ওয়াকিটকি হাতে বাসার প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢোকেন। এরপর তারা লিফটে করে ভবনের একটি ফ্ল্যাটে যান। সেখান থেকে তারা রাত সাড়ে ১১টার দিকে বেরিয়ে আসেন। তারা চলে যাওয়ার পর রাত পৌনে দুইটার দিকে নেপালিরা ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে বাসাটি ত্যাগ করেন। ওয়াকিটকি হাতে ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশ করা তিন ব্যক্তির বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে র্যাব ও পুলিশ।
ইয়াং মেনস, ওয়ান্ডারার্স ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্লাবে অভিযান পরিচালনার নেতৃত্বে ছিলেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই তিনটি ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনার সঙ্গে ১৬ জন নেপালি নাগরিক জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। যারা অভিযানের খবর পেয়ে পালিয়ে গেছেন।
তাদের দেশত্যাগের সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, নেপালিদের সবচেয়ে বড় সুবিধা তাদের ভারতে যেতে ভিসা লাগে না। এ সুযোগে তারা যে কোনো বর্ডার দিয়েই ভারতে ঢুকে যেতে পারেন, তারপর সেখান থেকে সহজেই নেপালে চলে যেতে পারবেন। তাই তাদের দেশত্যাগের বিষয়টি অসম্ভব নয়। তারপরেও আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাদের খুঁজে পেতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তারা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে দেশে চাকরি করে থাকলে তাহলে বিষয়টি একরকম। কিন্তু ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে কাজ করলে আইন অনুযায়ী বিষয়টি অবৈধ। আমরা দু’একজনের কাগজপত্র পেয়েছি, তারা ট্যুরিস্ট ভিসায় এসে কাজ করছিল। তাই তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুরো প্রক্রিয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মনে করেন র্যাবের এই কর্মকর্তা।
এদিকে, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে ক্যাসিনো পরিচালনায় ১৬জন নেপালি নাগরিকের সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তাদের অবস্থান নিশ্চিত হতে এবং আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইয়াং মেনস, ওয়ান্ডারার্স, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং গোল্ডেন ঢাকা ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর সন্ধান পায় র্যাব। মাদকসহ উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। এদিন রাতেই ইয়াং মেনস ক্লাবের নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্র ও মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়।
২০ সেপ্টেম্বর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র থেকেও মাদক ও ক্যাসিনো সামগ্রীসহ গ্রেফতার করা হয় ক্লাবটির সভাপতি ও কৃষকলীগ নেতা সফিকুল ইসলাম ফিরোজকে। এরপর ২২ সেপ্টেম্বর মতিঝিলের আরও চারটি ক্লাব আরামবাগ, দিলকুশা, ভিক্টোরিয়া ও মোহামেডান ক্লাবে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো সামগ্রী ও মাদক জব্দ করে পুলিশ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯
পিএম/এএ