বাগেরহাট সরকারি কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ জেলার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ সরকারি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯৬৫ সালে ৩ দশমিক ৯০ একর জমির উপর ‘ভোকেশনাল ট্রেনিং ইন্সটিউিট (ভিটিআই)’ নামে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৬৭৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে ডিপ্লোমা পর্যায়ে ৪টি সেমিষ্টারে ১৩০, এসএসসিতে (৯ম ও ১০ম) দুই শিফটে ৩৯৭, এইসএসসিতে (একাদশ ও দ্বাদশ) ১৫১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবে চার বছরেও ডিপ্লোমা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো শিক্ষক বা শ্রেণিকক্ষ বৃদ্ধি হয়নি। আর এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের জন্য অনুমোদিত জনবলেরও অনেক পদ শূন্য রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ট্রেডে একজন চিফ ইনস্ট্রাক্টর, একজন ইনস্ট্রাক্টর ও দুইজন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর থাকার কথা থাকলেও কোনো ট্রেডে তা নেই। এর মধ্যে ইকেলক্ট্রিক্যাল ট্রেডে একজন ইনস্ট্রাক্টর ও একজন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর রয়েছে। কম্পিউটার ট্রেডে রয়েছে মাত্র একজন ইনস্ট্রাক্টর। রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশনিং, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফেব্রিকেশন ট্রেড দুইটিতে একজন করে চিফ ইনস্ট্রাক্টর ও একজন জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর রয়েছে। এই হিসেবে চারটি ট্রেডে ১৬ জন প্রশিক্ষকের পদ থাকলেও আছে মাত্র ৭ জন। এছাড়া হিসাব রক্ষক ও স্টোর কিপারের মত গুরুত্বপূর্ণ পদও দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলেও ননটেক (বাংলা, ইংরেজিসহ অন্যান্য) বিষয়গুলোর জন্য ৬টি পদের বিপরীতে ৬ জন শিক্ষকই রয়েছে। এদিকে অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে পরিত্যক্ত দুইটি টিনের ঘরেও ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষক ও অধ্যক্ষের কোয়ার্টার থাকার অনুপযোগী বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষ। এমনকি শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো আবাসিক ব্যবস্থাও নেই প্রতিষ্ঠানটিতে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাণ, ল্যাবের সংকট রয়েছে। মাত্র একটি ইলেকট্রিক্যাল ল্যাব দিয়ে চলছে ডিপ্লোমা, এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাস।
শিক্ষক সংকট ও প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রায়ই প্রতিষ্ঠানে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যায়। ডিপ্লোমা পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করে অন্যত্র চলে গেছে। যারা আছে তারা কোনো কাজ শিখতে না পেরে হতাশার মধ্যে রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা ডিপ্লোমা ৫ম পর্বের শিক্ষার্থী ফয়সাল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অনেক দূর থেকে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা করতে ভর্তি হয়েছি। এখানে কোনো হোস্টেল নেই। তারপরও অনেক কষ্ট করে থেকেছি। শুধু পড়াশোনার জন্য। কিন্তু এখানে ঠিকমত ক্লাস ও ব্যবহারিক হয় না। আমি খুব হতাশ হয়েছি।
ডিপ্লোমা শিক্ষার্থী সাতক্ষিরার শামীম হোসেন, রংপুরের শরিফুল ইসলাম, খুলনার ওমর ফারুক, বগুরার মোঃ সামিউল ইসলাম, রেজোয়ানুল করিম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এখানে হাতে কলমে কাজ ও ভালো শিক্ষা পাওয়ার জন্য ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু ল্যাব সংকটের কারণে ব্যবহারিক ক্লাস করতে পারিনা। শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক-সংকটে তত্বীয় ক্লাস ও নিয়মিত হয় না। অনেক সময় দেখা যায় আমাদের ক্লাসের সময়ই একই কক্ষে অন্য কোনো ট্রেডের শিক্ষার্থীদের ক্লাস হচ্ছে। আমাদের ক্লাস যে শিক্ষকের নেওয়ার কথা ছিল, তিনি অন্য শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দ্বাদশ শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী বাংলানিউজকে বলেন, কলেজে প্রতিদিনই কোনো না কোনো ক্লাস মিস যায়। বিশেষ করে আমাদের অধ্যক্ষ স্যার কোনো ক্লাস নিতে রাজি হন না। তার কাছে যদি ক্লাসের কথা বলা হয়, তিনি অন্য ক্লাসের অজুহাত দেখান।
জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস ট্রেডের ইনস্ট্রাক্টর দেবব্রত কর্মকার ও ইনস্ট্রাক্টর শেখ মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ডিপার্টমেন্টে মাত্র দুইজন শিক্ষক রয়েছি। ল্যাব মাত্র একটি। এনিয়ে যেমন শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন অনুযায়ী ক্লাস নিতে পারি না, তেমনি একটি ল্যাবে সব বিভাগকে ব্যবহারিক করার সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। এসব সংকট কাটাতে না পারলে শিক্ষার্থীরা মূল শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে।
অধ্যক্ষ শেখ মোঃ মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, অডিটোরিয়াম নেই, খেলার মাঠ নেই, প্রয়োজনীয় শ্রেণিকক্ষ নেই, পদ অনুযায়ী শিক্ষকেরও সংকট রয়েছে। সব সংকটের মধ্যেও আমরা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় ক্লাস ও ব্যবহারিক করানোর চেষ্টা করছি। আমরা অব্যবহৃত টিনের ঘরেও শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছি। প্রতিষ্ঠানের জন্য ১০ হাজার ৭৫০ বর্গ ফুটের একটি তিনতলা ভবনের অনুমোদন হয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে এসব সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯
এমএমইউ