নির্মল বাতাস আর নৈসর্গিক পরিবেশে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে রোজ সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিনোদনপিপাসুদের ঢল নামে পদ্মাপাড়ে। সকাল নেই, দুপুর নেই, সব সময় পদ্মাকে ঘিরে নতুন প্রাণচাঞ্চল্যে মুখরিত থাকে পদ্মারপাড়।
মানুষের বিনোদনের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পদ্মার ধারঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছে সুদৃশ্য ওয়াকওয়ে। উন্নতমানের এ সড়ক দিয়ে সহজেই বিনোদনপিপাসুরা হেঁটে পদ্মার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। প্রকৃতির ছোঁয়ায় কাটাতে পারেন অখণ্ড অবসর।
প্রতিদিন শহর ও গ্রাম থেকে অসংখ্য মানুষ একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পদ্মা নদীর ধারে যান। সেখানে বসে প্রাণ জুড়ান এবং শরীরের ক্লান্তি দূর করেন। আর উৎসবে তো কথায় নেই। মানুষ উপচে পড়ে এখানে। সব মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন।
কিন্তু পদ্মারপাড় ঘিরে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উৎপাত বাড়ছেই। তাদের কারণে প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে নির্মল বিনোদনের জন্য আসা মানুষদের। পুরো পাড় ঘেঁষে ‘ব্যাঙের ছাতার’ মতো গজিয়ে ওঠা বাদামওয়ালা, চা-কফির দোকানসহ বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কারণে নষ্ট হচ্ছে পদ্মাপাড়ের সৌন্দর্য। এসব ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে অসহায় ভ্রমণপিপাসুরা। চেয়ার পেতে পাড় দখলে নিয়েছে তারা। এসব ব্যবসায়ীর উৎপাতে নদীর পাড় ঘিরে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাদের পেতে রাখা চেয়ারগুলো যেন মানুষ ধরার ফাঁদ! সেই চেয়ারে না বসলে সহজে ফিরে আসাই এখন মুশকিল। আর চেয়ারে বসলেই গুনতে হয় বিল। নদীর পাড় ঘিরে চেয়ার পেতে এখন যেন ডাকাতি চলছে। পুরো পাড় ঘিরে চেয়ার পাতা। পাড় সংলগ্ন রাস্তায় চেয়ার বসিয়ে হাঁটা-চলা এবং অনেক জায়গায় বসার জায়গা পর্যন্ত রাখা হয়নি।
টি-বাঁধে হেঁটে যাওয়ার কোনো পথই নেই। কেউ যেতে চাইলে চেয়ার ডিঙিয়ে যেতে হবে। ফলে বাধ্য হয়ে মানুষ এসব চেয়ারে বসেন। কিন্তু এসব চেয়ারে বসলেই দিতে হয় টাকা। চেয়ারে বসার জন্য জনপ্রতি ২০-১০০ টাকা জোরপূর্বক আদায় করা হচ্ছে।
চেয়ারে বসলে আবার এসব ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে পণ্য কিনতেও বাধ্য করা হয়। টাকা দিতে ও পণ্য কিনতে অস্বীকৃতি জানালে দুর্ব্যবহার ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। ফলে মানুষ পদ্মাপাড়ে গিয়ে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, মহানগরীর পদ্মাগার্ডেন থেকে টি-বাঁধ পর্যন্ত নদীর পুরো পাড় ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের দখলে। নদীপাড়ে পা রাখলেই পড়েন নানা ধরনের বিপত্তিতে। হকার আর ব্যবসায়ীদের নৈরাজ্যে কোথাও স্বস্তি মেলে না।
চেয়ার পেতে ইচ্ছামতো পাড় দখলে নিয়েছে। নিরিবিলি বসে থাকা তো দূরের কথা, হেঁটে যাওয়ার মতো রাস্তাও নেই। যে যার মতো দখল করে ব্যবসার ফাঁদ পেতেছে। হাঁটাচলার রাস্তা ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোর দখলে থাকায় ভ্রমণপিপাসুদের বাধ্য হয়ে দোকানের চেয়ারে বসতে হচ্ছে। এসব চেয়ারে বসলেই গুনতে হচ্ছে টাকা।
চেয়ারে বসার বিনিময়ে টাকা দেওয়ার নির্দেশনা লেখা নেই। মানুষ না বুঝে চেয়ারে বসলেই ২০-১০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। তাদের পাতানো চেয়ারে বসলে সহজে টাকা না দিয়ে ফিরে আসায় মুশকিল। টাকার জন্য তারা ছেঁকে ধরছে দর্শনার্থীদের। টি-বাঁধ ঘুরতে আসা রাজশাহী মহানগরীর কাজলা এলাকার বাসিন্দা আহমদ হোসেন বলেন, চটপটিওয়ালাদের অবৈধভাবে দখলের কারণে বাঁধের ওপর দাঁড়িয়ে কিংবা বসে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় না। নদীপাড়ে পা রাখলেই নানা ধরনের বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে। এসব ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলছে। মনে হচ্ছে নদীতীরে কারও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
পাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সপরিবারে ঘুরতে এসেছেন শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, চেয়ারে বসলেই তাদের চটপটি ও ফুচকাসহ কিছু না কিছু খেতে হয়। না খেলেই তুলে দেয়া হয় চেয়ার থেকে। চেয়ারে না বসলে তো সেখানে তো আর বসার জায়গা নেই।
পদ্মার টি-বাঁধের চটপটি ব্যবসায়ী নুরুল আমিন, গোলাম কবির, খোরশেদ আলির দাবি, পদ্মাপাড়ে তাদের চেয়ারেই ব্যবসা চলে। এই ব্যবসা করে তাদের সংসার চলে। সামনের দিকে চেয়ার না দিলে বেড়াতে আসা লোকজন চেয়ারে বসে না এবং তাদের চটপটিও খায় না। এজন্য তারা বাঁধের সামনের দিকে চেয়ার বসিয়ে ব্যবসা করছেন।
রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহাদাত হোসেন বলেন, অবৈধ ব্যবসা উচ্ছেদে তাদের কোনো নির্দেশনা নেই। তারা (পুলিশ) শুধু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখেন।
তবে নির্দেশনা পেলে তারা একদিনের মধ্যে চটপটিওয়ালাদের উচ্ছেদ করে টি-বাঁধের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনবেন বলে জানান ওসি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৯
এসএস/এএ