সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত আর্সেনিক নিয়ে এক গবেষণায় উঠে এসেছে এসব তথ্য।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বব্যাপী আর্সেনিক দূষণ একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্সেনিক হলো ধূসর আভাযুক্ত সাদা রং বিশিষ্ট একটি উপধাতু। প্রকৃতিতে আর্সেনিক প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সাম্প্রতিককালে মনুষ্যসৃষ্ট কার্যাবলী যেমন অক্সিডেশনের ফলে আর্সেনিক ভূগর্ভস্থ পানিতে দ্রবীভূত হচ্ছে। আর সেই পানি নলকূপের মাধ্যমে তুলে পান করে বিপুলসংখ্যক মানুষ আর্সেনিকজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে আর্সেনিকোসিসের মূল কারণ ভূগর্ভস্থ আর্সেনিকযুক্ত পানি পান ও জৈব আর্সেনিকযুক্ত (যেমন- শস্যকণা, শাকসবজি, মাংস, দুধ ইত্যাদি) খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ। যা নীরব ঘাতকের মতো মানবদেহের বহু ক্ষতি সাধন করে থাকে।
২০১৭ সালে কিছু নির্বাচিত উপজেলা ১০ হাজার অধিবাসীর ওপর চালানো এক গবেষণায় ৮৭০ জন ব্যক্তি আর্সেনিকোসিসে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। এর মধ্যে পুরুষ ৫২ দশমিক ৬ শতাংশ ও নারী ৪৭ দশমিক ৪ শতাংশ।
গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ আক্রান্ত রোগী ৩১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। বর্তমানে এরা আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করায় ও নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণ করায় কিছুটা সুস্থ রয়েছেন।
চিকিৎসকদের মতে, আর্সেনিক রোগের লক্ষণগুলো হচ্ছে ত্বকে কালো কালো দাগের মাঝে সাদা সাদা দাগ যা বৃষ্টির ফোটার মত দেখায়, ত্বক কালচে বর্ণ ধারণ, হাত ও পায়ের চামড়ার পুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়া এবং চামড়া খসখসে হয়ে যাওয়া। তাছাড়া এ গবেষণায় প্রায় ১৬ শতাংশ রোগী বিভিন্ন ধরনের চামড়ার ক্যান্সার অথবা ক্যান্সার পূর্ববর্তী লক্ষণ এ আক্রান্ত ছিলেন আর্সেনিকোসিসের কারণে।
সম্প্রতি বিএসএমএমইউ পরিচালিত গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলে পাওয়া গেছে আর্সেনিকোসিসে রক্তশূন্যতা ৫৭ দশমিক ৭ শতাংশ, শারীরিক দুর্বলতা ১২ দশমিক ৯ শতাংশ, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা ৭ দশমিক ৬ শতাংশ, শ্বসন তন্ত্রের সমস্যা ৬ দশমিক ২ শতাংশ, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা ৬ দশমিক ৯ শতাংশ, হৃদরোগজনিত সমস্যা ৩ দশমিক ৫ শতাংশ রোগীর মাঝে পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত রোগীদের মাঝে বন্ধ্যাত্ব বিদ্যমান। আবার বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গ যেমন লিভার, ব্লাডার ক্যান্সারও পাওয়া গেছে।
বর্তমানে ৮১ দশমিক ১ শতাংশ রোগী আর্সেনিক সহনীয় মাত্রার পানি পান করছে। অথচ তারা আর্সেনিক জনিত বিভিন্ন প্রকার রোগের লক্ষণ ও ক্যান্সার নিয়ে চিকিৎসকদের কাছে আসছেন। দিনদিন সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আর্সেনিক সমস্যা প্রকট থেকে প্রকটতর হচ্ছে। তাই প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে কীভাবে আমরা আর্সেনিক সংক্রান্ত জটিলতার মুখোমুখি হবো এবং এর কার্যকরী প্রতিকার করবো?
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্মরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহ সিকদার বাংলানিউজকে জানান, আর্সেনিকোসিস নিরাময়ের কোনো সুনির্দিষ্ট ও নিশ্চিত চিকিৎসা এখন পর্যন্ত হয়নি। চিকিৎসার প্রাথমিক ধাপ হলো আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করা। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। এছাড়াও ভিটামিন এ, সি, ই স্পিরুলিনা ইত্যাদি সম্পূরক হিসেবে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বিএসএমএমইউ’র গবেষণায় এসব প্রদান করে উপকার প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া হাত-পায়ের পুরুত্বের চিকিৎসায় বিভিন্ন মলম (যেমন স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড, ইউরিয়া) ব্যবহার করা হয়। তার সঙ্গে সঙ্গে নিয়মিত ক্যান্সারের চিকিৎসা পরিচালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৯
এমএএম/এইচএডি