লতিফুন বেগম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের উত্তর গোবদা গ্রামের শঠিবাড়ি বাজারের পূর্ব পার্শ্বে নুরজাহানের স্বামী পরিত্যক্তা বোন।
স্থানীয়রা জানান, দুই/আড়াই বছর আগে একমাত্র বোবা সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী লতিফুনকে তালাক দেন একই এলাকার দীঘলটারী গ্রামের আছিমুল্লাহ।
মানসিক ভারসাম্যহীন বোনকে সুস্থ করতে ধারদেনা করে বেশ কিছুদিন রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকার চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করান বিধবা নুরজাহান। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার অভাবে দিনদিন অবনতি ঘটে। অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে লতিফুনের চিকিৎসা। মানসিক ভারসাম্যহীন এ বৃদ্ধা পথচারীসহ বাজারের দোকানপাট ও এলাকাবাসীর ঘরবাড়িতে বেশ ক্ষতি করতে শুরু করেন।
তাই ডান পায়ে শেকল দিয়ে বাড়ি সংলগ্ন রাস্তার পাশে একটি গাছে বেঁধে রাখা হয় লতিফুনকে। সেখানে দিন-রাত ঝড় বৃষ্টি বা রোদ সহায় করে কেটে যাচ্ছে লতিফুনের দুই বছর। অন্যের রান্না করা খাবার তিনি খান না। শেকলে বাঁধা গাছতলায় একটা চুলা তৈরি করেছেন বৃদ্ধা। রয়েছে পাতিল, লাকড়ি ও রান্নার সামগ্রী। সময় হলে সাধ্যমত চাল ডাল ও পানি সরবরাহ করেন বোন নুরজাহান। সেখানে নিজে রান্না করেই খাবার খান প্রতিবন্ধী লতিফুন বেগম। এক বছর আগে উপজেলা সমাজসেবা অফিস বৃদ্ধা লতিফুনের নামে একটি প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। সেই টাকা উত্তোলন করে তাকে খাওয়ান বিধবা বোন নুরজাহান।
ওই গ্রামের মাহফুজার রহমান বাংলানিউজকে বলেন, মাথায় সমস্যা থাকায় ছেড়ে দিলে মানুষের ক্ষতি করে। তাই তাকে শেকলে বেঁধে রেখেছেন পরিবার। উন্নত চিকিৎসা হলে হয়তোবা সুস্থ হতেন লতিফুন। কিন্তু তার তো কেউ নেই। একমাত্র বিধবা বোন নিজেই খেতে পারেন না। এর চিকিৎসা করাবেন কীভাবে।
লতিফুনের বোন নুরজাহান বলেন, সে অনেকের ক্ষতি করে। তাই পায়ে শেকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। ঘরে বেঁধে রাখলে ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে ফেলে বাইরে চলে যায় আর অন্যের ক্ষতি করে। তাকে সুস্থ করতে চিকিৎসকরা পাবনা মানসিক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু, গরিব মানুষ নিজে খাইতে পারি নাভ বোনের চিকিৎসা কী দিয়ে করাবো- যোগ করেন নুরজাহান। প্রতিবন্ধী বোনের চিকিৎসার জন্য সরকারি মহল বা সমাজের বিত্তবানদের সাহায্য কামনা করেন তিনি।
দুর্গাপুর ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্টার কাজী মাহমুদুল হাসান জুয়েল বাংলানিউজকে বলেন, সুখের সংসার ছিল লতিফুনের। তালাকের কিছুদিন পর থেকে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। গরীব বোন নুরজাহান সাধ্যমত চিকিৎসা করালেও উন্নত চিকিৎসা হয়নি। প্রতিদিন মানুষের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে ক্ষতি করত। তাই প্রায় দুই বছর ধরে পায়ে ছিকল বেঁধে রেখেছেন পরিবার। সরকারি বা বেসরকারি ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করলে তার সুচিকিৎসা দিলে তিনি সুস্থ হতেন। তাই সরকারি উচ্চ মহলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১১, ২০১৯
এসএইচ