ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শেকলে বাঁধা সেই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিলেন ডিসি

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
শেকলে বাঁধা সেই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিলেন ডিসি বৃদ্ধা লতিফুন বেগমকে উদ্ধার করছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ইনসাটে শেকলে বাঁধা লতিফুন। ছবি: বাংলানিউজ

লালমনিরহাট: দীর্ঘ দু’বছর ধরে শেকলে বাঁধা জীবন থেকে মুক্তি পেলেন বৃদ্ধা লতিফুন বেগম। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর ডট কমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর জেলা প্রশাসন (ডিসি) তাকে শেকল থেকে মুক্ত করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) দিনগত রাত ১০টার দিকে বৃদ্ধা লতিফুনকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে একইদিন সকালে বাংলানিউজে বৃদ্ধা লতিফুনের বন্দি জীবন নিয়ে ‘রোদ,বৃষ্টি,ঝড়ে শেকলে বাঁধা বৃদ্ধা লতিফুন!’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতাবেদন প্রকাশিত হয়।

লতিফুন বেগম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের উত্তর গোবদা গ্রামের শঠিবাড়ি বাজারের পূর্ব পাশের নুরজাহানের স্বামী পরিত্যক্তা বোন।

স্থানীয়রা জানান, দুই থেকে আড়াই বছর আগে একমাত্র বোবা সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী লতিফুনকে তালাক দেন একই এলাকার দীঘলটারী গ্রামের আছিমুল্লাহ। এরপর লতিফুনের ঠাঁই হয় শঠিবাড়ি বাজারের পূর্ব পাশে দুর্গাপুর ইউনিয়ন ফেডারেশন ভবনের সামনে বিধবা বোন নুরজাহানের একমাত্র ঘরে। নুরজাহানের ছেলেমেয়েরা সবাই বিয়ে করে ঢাকায় অবস্থান করায় সরকারিভাবে পাওয়া বিধবা ভাতার অর্থ ও ঝিঁয়ের কাজ করে চলে নুরজাহানের সংসার। তালাকের কিছুদিন পরে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েন লতিফুন। বৃদ্ধা মানসিক ভারসাম্যহীন বোনকে সুস্থ করতে ধারদেনা করে বেশ কিছুদিন রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকার চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করান বিধবা নুরজাহান। কিন্তু উন্নত চিকিৎসার অভাবে দিনদিন অবনতি ঘটে লতিফুনের। অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে তার চিকিৎসা। মানসিক ভারসাম্যহীন এ বৃদ্ধা পথচারীসহ বাজারের দোকানপাট ও এলাকাবাসীর ঘরবাড়িতে বেশ ক্ষতি করতে শুরু করেন।

বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকালে বাংলানিউজে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে জেলা প্রশাসক আবু জাফরের নির্দেশে রাতেই আদিতমারী ইউএনও (ভারপ্রাপ্ত) জিআর সারওয়ার ও এনডিসি শহিদুল ইসলাম সোহাগ থানা পুলিশ নিয়ে ওই বাড়িতে যান। পরে বৃদ্ধা লতিফুনকে শেকল থেকে মুক্ত করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার দেখাশোনা করতে তার বোন নুরজাহানকেও সরকারি গাড়িতেই হাসপাতালে নেওয়া হয়।

প্রতিবন্ধী বোনের চিকিৎসায় জেলা প্রশাসন এগিয়ে আসায় আনন্দিত বিধবা বোন নুরজাহান বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্বপ্নেও ভাবি নাই বাহে। ডিসি সাব গাড়ি পাঠে দিয়া অসুস্থ বোনকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। আল্লায় ডিসি সাবের আর তোমার (এ প্রতিবেদকের) মঙ্গল করবেন। ’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (এনডিসি) শহিদুল ইসলাম সোহাগ বাংলানিউজকে বলেন, বাংলানিউজে প্রকাশিত খবর দেখে জেলা প্রশাসক আবু জাফর মহোদয় ওই বৃদ্ধার বিষয়ে খোঁজখবর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী রাতে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ভারপ্রাপ্ত) জিআর সারওয়ার ও থানা পুলিশ নিয়ে বৃদ্ধা লতিফুনের পায়ে লাগানো শেকল খুলে দেওয়া হয়। সেসঙ্গে তার চিকিৎসার জন্য তাকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসাকরা তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন।

বৃদ্ধা লতিফুনকে সুস্থ করতে চিকিৎসকরা প্রয়োজন মনে করলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দেশের ভালো হাসপাতালে পাঠাবেন। জেলা প্রশাসন তার সব ধরনের খরচ বহন করবে।

লতিফুনের পরিবারের দাবি, পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করা প্রসঙ্গে এনডিসি বলেন, সিভিল সার্জনসহ চিকিৎক বোর্ডের সিদ্ধান্ত মতেই তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হবে। সেটা পাবনা মানসিক হাসপাতাল বা দেশের অন্য কোনো উন্নত হাসপাতাল হোক। এমন মানবিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সেবা বঞ্চিতদের দোড়গড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ায় বাংলানিউজ কর্তৃপক্ষকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতাসহ ধন্যবাদ জানান এনডিসি শহিদুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।