খাল-বিল ও ডোবা-নালা এমনকি জলাশয় ভরাট করে তৈরি করা হচ্ছে ভবন। বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারি নিদের্শনা তো মানা হচ্ছেই না, এমনকি অগ্নি নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিও মানছেন না প্রভাবশালী এসব ভবন মালিকেরা।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের হিসাব বলছে, জেলা শহরে সাধারণত বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে অনুমোদন দিয়ে থাকেন সংশ্লিষ্ট পৌরসভা। তবে ষষ্ঠতলার বেশি অর্থাৎ বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে জেলা প্রশাসকের গঠন করা কমিটির অনুমোদন দিতে হয়। সেক্ষেত্রে বহুতল ভবন নির্মাণে মাটি পরীক্ষা, অবকাঠামোগত সুবিধা, অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ১০টি নিয়ম মানার কথা রয়েছে ইমারত আইনে। অথচ গড়ে ওঠা এসব ভবনের সিংহভাগই এসব নিয়ম না মানার দলে। অনেক ভবন মালিকেরও নেই ছাড়পত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গার প্রায় শতাধিক বহুতল ভবন নির্মাণ হয়েছে এবং হচ্ছে। এরআগে নির্মাণ হয়েছে প্রায় কয়েকশ ভবন। এদের বেশির ভাগই অনুমোদন নেই। প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে থাকার কারণে ভবন মালিকরা ইমারত আইনের তোয়াক্কা করছেন না। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় পৌরসভা থেকে বাঁধা দেওয়ার পরও ক্ষমতার দাপটে পিছু হটছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
কোনো কোনো ভবন মালিক আবার কৌশলী হয়ে স্থানীয় পৌরসভা থেকে ষষ্ঠতলার অনুমোদন নিয়ে ভবন তৈরি করেছেন। পরে গোপনে ষষ্ঠতলা থেকে বাড়িয়ে গড়ে তুলেছেন সুউচ্চ ভবন। যার কোনোটিতেই নেই ফায়ার সার্ভিসসহ জেলা প্রশাসনের অনুমোদন।
চুয়াডাঙ্গা শহরের বাসিন্দা বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে তোলা হচ্ছে একের পর এক বহুতল ভবন। যাদের বেশির ভাগই গড়ে উঠছে নিয়ম নীতির বাইরে। এতে করে ভূমিকম্পসহ যেকোনো দুর্যোগে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকছে।
স্থানীয় রবিউল ইসলামের অভিযোগ, বিল্ডিং কোডের পাশাপাশি অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি অতীবও জরুরি হলেও মানছেন না ভবন মালিকেরা। এতে করে রাজধানী ঢাকার কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা তার।
চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুস সালামের মতে, বাড়ি নির্মাণতো বটেই, বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্নিনিরাপত্তার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা আইন মানছেন না, তারা নিজের অজান্তেই মৃত্যুকে কাছে ডেকে আনছেন। এক্ষেত্রে অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আরও কঠোর ও সর্তক হওয়ার পরামর্শ তার। তা না হলে ছোট-খাট দুর্ঘটনাতেও প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এইচ এম ফয়জুল ইসলাম জানান, বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারি নিয়মনীতি মানা অত্যাবশীয়। এতে কোনোরূপ শিথিলতা প্রদর্শনের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কঠোর আইন আছে। এ ছাড়া ভবন নির্মাণ আইন না মানলে নিজের অজান্তেই অনিরাপদ ভবন তৈরি হবে। যা কোনোভাবেই কারও জন্য কাম্য নয়।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু জানান, চকবাজার ও বনানীর অগ্নিকাণ্ডসহ নানা ঘটনা নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে তাদের। তার দাবি, আইন না মানা ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে দ্রুত মাঠে নামবে পৌর কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসানের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে কোনোভাবেই অনিরাপদ বহুতল ভবন নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না। খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে কঠোর হবে স্থানীয় প্রশাসন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৯
ওএইচ/