ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

কমিউনিটি ক্লিনিকে সীমাহীন অনিয়ম, সেবাবঞ্চিত হাওরবাসী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
কমিউনিটি ক্লিনিকে সীমাহীন অনিয়ম, সেবাবঞ্চিত হাওরবাসী তালাবদ্ধ কমিউনিটি ক্লিনিক, ছবি: বাংলানিউজ

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আজিমনগর কমিউনিটি ক্লিনিক সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তালাবদ্ধ রয়েছে। এ ব্যাপারে জানার জন্য মোবাইলে বার বার কল দেওয়ার পরও রিসিভ করেননি দায়িত্বরত হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার। পরে দুপুর আড়াইটার দিকে জানা যায় তিনি উপজেলার বাইরে। এটা এই কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রায় রোজকার চিত্র।

তালাবদ্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে ক্লিনিকটির হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার সুব্রত কুমার বাংলানিউজকে বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগের কাজে আমি বানিয়াচং গিয়েছিলাম।  

চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যাওয়া ৭৫ বছর বয়সী আয়মনা বিবি আক্ষেপ করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারি ওষুধ নিবার লাগি তিন দিন আইলাম, একদিনও ফাইলাম না।

এই ধরনের আসপাতাল (হাসপাতাল), থাইক্ক্যা (থেকে) অই কিতা অইব (কী হবে), আর না থাইক্ক্যা ওই আমারার কিতা অইব?’

শুধু আজিমনগরই নয় সম্প্রতি কয়েকদিনে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়পুর, জলসুখা, বদলপুর ও কাকাইলছেও এবং বানিয়াচং উপজেলার কাদিরগঞ্জ, কাগাপাশা এবং দৌলতপুর এলাকার ছয়টি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে পাওয়া যায়নি দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে। অভিযোগ রয়েছে- নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো ক্লিনিক খুলে কিছুক্ষণ বসে তালাবদ্ধ করে চলে যান কর্মচারীরা। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীদের বিনামূল্যে ৩০ প্রকার ওষুধ দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হচ্ছে না কাউকে।

হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ২১৪টি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৬, লাখাই ১৭, মাধবপুরে ৩৬, চুনারুঘাটে ৩৩, নবীগঞ্জে ৩৮, বাহুবলে ১৯, বানিয়াচংয়ে ২৯ এবং আজমিরীগঞ্জে রয়েছে ১৬টি। এসবের প্রত্যেকটিতে একটি ভবনে একজন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার নিযুক্ত আছেন। তবে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার ১৩টিতে ভবন থাকলেও অন্য তিনটি পরিচালিত হচ্ছে অস্থায়ীভাবে ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িতে।

জানা গেছে, জেলা শহরের আশপাশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো নরমাল ডেলিভারিসহ বিভিন্ন রোগীকে সেবা দিয়ে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার অর্জন করে থাকলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে এটা নেই। খবরও রাখা হচ্ছে না এসবের।
তালাবদ্ধ কমিউনিটি ক্লিনিক, ছবি: বাংলানিউজসিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে খোঁজখবর না নেওয়ার কারণে খেয়াল-খুশিমতো দায়িত্ব পালন করছেন কর্মরতরা। ৩০ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হচ্ছে না। সরকারি ওষুধ বিভিন্ন ফার্মেসিতে বিক্রি করে দায়িত্বপ্রাপ্তরা টাকা নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের শামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে কখনও ওষুধ পাওয়া যায় না। কর্মরত একজন থাকলেও মাসে দুয়েকদিন এসে কিছু সময় বসে চলে যান।

জলসুখা গ্রামের মনুরা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আমি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে কাউকে পাইনি। দু’ঘণ্টা বসে থাকার পর এক ব্যক্তি আসলেও কোনো ওষুধ না দিয়ে উল্টো আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।

কাকাইলছেও ইউনিয়নের বাসিন্দা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, আমার এলাকার লোকজন সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না। কমিউনিটি ক্লিনিক একটি থাকলেও কোনো কাজে আসছে না। হাওরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন তিনি।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সিভিল সার্জন একেএম মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমি এখানে নতুন যোগ দিয়েছি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
এফএম/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।