ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

রাঙামাটিতে মাসব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৯
রাঙামাটিতে মাসব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসব কঠিন চীবর দানোৎসব উদযাপন করা হচ্ছে রাঙামাটিতে, ছবি: বাংলানিউজ

রাঙামাটি: বছর ঘুরে আবার এসেছে বৌদ্ধদের কঠিন চীবর দানোৎসব। এটি পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। এরই ধারাবাহিকতায় রাঙামাটি জেলাজুড়ে বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে উদযাপন করা হচ্ছে উৎসবটি।

উৎসব কেন্দ্র করে জেলার প্রত্যন্ত এলাকার বিহারে বিহারে চলছে নানা আয়োজন। কঠিন চীবর দানকে ঘিরে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে বইছে উৎসবের আমেজ।

উৎসবে মেতে উঠেছে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ছাড়াও বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ। সাধু সাধু ধ্বনিতে মুখরিত হচ্ছে মন্দিরগুলো।

বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস থেকে জানা গেছে, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে প্রচলন হয় কঠিন চীবর দান। গৌতম বুদ্ধের তৎকালীন শীর্ষ বিশাখা দেওয়ান ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা তৈরি করে, সে সুতা রঙ করে আগুনে শুকিয়ে কোমড় তাঁতে চীবর বুনে তা গৌতম বুদ্ধকে দান করেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া কাপড়কে বলা হয় চীবর। চীবর হচ্ছে ভিক্ষুদের পরিধেয় বিশেষ রঙিন কাপড়।

২৪ ঘণ্টার মধ্যে চীবর তৈরির কঠিন কাজটি সম্পাদন করতে হয়ে বলে একে কঠিন চীবর দান বলা হয়। বৌদ্ধদের বিশ্বাস কঠিন চীবর দান করতে পারলে ইহকাল ও পরকালে নির্বাণ তথা মুক্তি লাভ করা সম্ভব। পার্বত্য এলাকার বৌদ্ধরা এ উৎসব পালন করেন প্রাচীন নিয়মে।

বৌদ্ধধর্মীয় গুরুরা জানান, কঠিন চীবর দান হচ্ছে সর্বোত্তম দান। এ দান যারা করবেন, তারাই নির্বাণ লাভ করতে পারবেন। নির্বাণ ছাড়া কোনো মানুষ তার আসল মুক্তি পেতে পারে না।

উপাসক-উপসিকা পরিষদ রাঙামাটি রাজবন বিহার শাখা কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বাংলানিউজকে বলেন, রাঙামাটিতে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী কঠিন চিবর দানোৎসব। বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে চলছে উৎসবের আমেজ। বৌদ্ধধর্মালম্বীরা এসব মন্দিরগুলোতে নির্বাণ লাভের আশায় ভিড় জমাচ্ছেন।

তিনি বলেন, চলতি বছরের আগামী ৭ ও ৮ নভেম্বর কঠিন চীবর দানের সবচেয়ে বড় আয়োজনটি করা হবে রাঙামাটির রাজবন বিহারে। এ বিহারে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে কঠিন চীবর দান।

দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের আগমন ঘটবে এ উৎসবে। এ উপলক্ষে ধর্মীয় কীর্তন, নাটক, চরকায় সুতা কাটা, বেইন বুনা, কল্পতরু এবং বর্ণাঢ্য  শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। উৎসব নির্বিঘ্নে করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রতি বছরের মতো অবগত করা হয়েছে বলে জানান বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এ নেতা।

রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবছরের মতো জেলা পরিষদ এবারও বৌদ্ধধর্মীয় কঠিন চীবর দানোৎসবে সহযোগিতা করবে। এ নিয়ে পরিষদের সদস্য এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তাদের সঙ্গে জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা করা হয়েছে। এবারও অত্যন্ত ঝাকঝমকভাবে বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা এ উৎসব আনন্দের সঙ্গে পালন করতে পারবেন।

রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ছুফি উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের উৎসব কঠিন চীবর দান সুষ্ঠুভাবে পালন করার লক্ষ্যে আমাদের পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন। ৭-৮ নভেম্বর দুই দিনব্যাপী জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় কঠিন চীবর দানোৎসবটি পালন করা হবে রাজবন বিহারে। এ উৎসবে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামবে। তাই পুলিশ সদস্যরাও এ উৎসবে নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন।

পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন বলে এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১৯
টিএ/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।