আষাঢ়ী পূর্ণিমার পরদিন থেকে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের তিন মাসব্যাপী ওয়া বা বর্ষাব্রত (উপোস) পালন শেষে প্রবারণা পূর্ণিমার মধ্যদিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। এরপর প্রতিটি বিহারে শুরু হয় কঠিন চীবর দানোৎসব।
বৌদ্ধ ধর্ম মতে, বুদ্ধের মহাউপাসিকা বিশাখার প্রবর্তিত ভান্তেকে চীবর দান করাই হলো কঠিন চীবর দানোৎসবের ঐতিহ্য। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তুলা থেকে সুতা তৈরি এবং সেই সুতা রং করে চীবর তৈরি করা হয়ে থাকে। প্রথমে চরকার মাধ্যমে তুলা থেকে সুতা বের করে, সুতা বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রং দিয়ে বেইনের মাধ্যমে তৈরি হয় চীবর (ভান্তেদের পরিধেয় বস্ত্র)।
পরদিন বিকেলে এ চীবর দায়ক দায়িকারা উৎসর্গ (দান) করেন ভান্তেদের উদ্দেশ্যে। এর আগে সকাল থেকেই পূণ্যার্থীর মিলনমেলায় পরিণত হয় খাগড়াছড়ির বিহারগুলো। এ দিন সকালে বুদ্ধ মূর্তি দান, সংঘদান, অষ্ট পরিস্কার দান, কল্পতরুসহ নানাবিধ সামগ্রী দান করা হয়। এসময় ধর্মীয় গুরুরা ধর্মীয় নির্দেশনা দেন এবং দেশ ও জাতির মঙ্গলকামনা করেন। সন্ধ্যায় হাজার বাতি প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দুই দিনব্যাপী ধর্মীয় কর্মসূচি শেষ হয়।
প্রতিদিনই খাগড়াছড়ির কোনো না কোনো বিহারে আয়োজন করা হচ্ছে এ কঠিন চীবর দানোৎসব। উৎসবে চাকমা, মারমা ও বড়ুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ শোভাযাত্রা নিয়ে বর্ষাবাস পালনকারী ভিক্ষুদের শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে উৎসবে অংশ নেন। পরজন্মে জ্ঞান লাভের আশায় পিদিম বা কল্পতরুতে দান করছেন ধর্মপ্রাণ নর-নারী। ভান্তেদের দেওয়া হচ্ছে বিশেষ ধরনের খাবার (সয়ং)।
এরইমধ্যে খাগড়াছড়ির য়ংড বৌদ্ধ বিহার, কল্যাণপুর বৌদ্ধ বিহার, পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুটিরসহ জেলা উপজেলার বেশ কয়েকটি বিহারে কঠিন চীবর দানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মাসব্যাপী শুরু হওয়া এ চীবর দানের মাধ্যমে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পুনর্জন্ম ও কর্মফলে বিশ্বাসী বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কায়িক, বাচনিক ও মানসিক বাসনা পূর্ণ হবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০১, অক্টোবর ২১, ২০১৯
এডি/এবি/ওএইচ/